প্রযুক্তি দুনিয়ার সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ন্যানোপ্রযুক্তি.

|
একুশ শতাব্দিতে এসেআইটি নিয়ে কথা যতটাশোনা গেছে, ততটাই শোনাগেছে এই ন্যানোপ্রযুক্তিজাপান এর জাতীয় গবেষনাবাজেটের সিংহভাগই ব্যবহৃত হচ্ছে ন্যানোপ্রযুক্তি সংক্রান্তবিষয়গুলিই উপর শুধুমাত্র জাপানই নয় ইউরোপ,আমেরিকা,চীন, কোরিয়া সবগুলিদেশই উঠেপড়ে লেগেছে এই সংক্রান্তগবেষনা নিয়ে কেন?তারা এই বিষয়ে সবথেকেঅগ্রগামী হতে চায়এই বিষয়ে লিডার হতেচায় আমেরিকাআইটি তে এগিয়ে থাকলেওনানোটেকনলজিতে অন্যান্য দেশগুলি পিছিয়ে থাকতে চায় না তাইভীষণ প্রতিযোগীতা চলছে দেশে বিদেশে কেনন্যানোপ্রযুক্তি নিয়ে সবার এতআগ্রহ? তার একটা সহজউত্তর হল, সামনের দিনহবে ন্যানোপ্রযুক্তির যুগ আপনারহৃদরোগ হয়েছে? ন্যানো রোবোট আপনারশরীরের ভিতরে ঢুকে সেইসব মেরামত করে দেবে আপনারহাতের ঘড়িটি হয়ে যাবেআপনার কম্পিউটার আপনার মোবাইল, সবকিছুই তাসম্ভব হবে ন্যানোপ্রযুক্তির বদৌলতে


ন্যানোপ্রযুক্তি কী?
 
ন্যানো একটি মাপারএকক ম্যাট্রিকএকক এর শুরুটা হয়েছিল১৭৯০ সনে ফ্রান্সেফ্রান্স জাতীয় পরিষদ এককগুলিকেসাধারণ করবার জন্য কমিটিগঠন করে এবং তারাইপ্রথম ডেসিমাল কিংবা দশ এককএর ম্যাট্রিক পদ্ধতির প্রস্তাব করেন এবংদৈর্ঘ্যের একক এক মিটারএর সূচনা করেনতারা পৃথিবীর পরিধির ৪০,০০০,০০০ ভাগের একভাগকে এক মিটার বলেন মিটারশব্দটি গ্রিক শব্দ metron থেকেএসেছে যার অর্থ হল,পরিমাপ এছাড়ামিটার এর ১০০ ভাগেরএক ভাগকে সেন্টিমিটার বলাহয় ১৭৯৩সনে ফ্রান্সে আইন করে তাপ্রচলন করা হয়১৯৬০ সনে এই মিটারএর সংজ্ঞা পরিবর্তন করাহয় ক্রিপটন৮৬ এর কমলারঙের রেডিয়েশনএর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ,৬৫০,৭৬৩.৭৩ ভাগের একভাগকে মিটার বলা হয় ১৯৮৩সনে মিটার এর সংজ্ঞাপুনরায় পরিবর্তিত করা হয়, বর্তমানসংজ্ঞা অণুযায়ী, বায়ুশুন্যে আলোর গতির ২৯৯,৭৯২,৪৫৮ ভাগেরএক ভাগকে মিটার বলাহয় এইমিটার এর ,০০০,০০০,০০০ (১০০কোটি) ভাগের এক ভাগকেন্যানোমিটার বলা হয়ন্যানো শব্দটি গ্রিক nanos শব্দথেকে এসেছে যার অভিধানিকঅর্থ হল dwarft কিন্তু এটি মাপেরএকক হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে আরএই ন্যানোমিটার স্কেলে যে সমস্তটেকনোলজি গুলি সর্ম্পকিত সেগুলিকেইবলে ন্যানোপ্রযুক্তি

মিটার এককটি আমাদেরদৈনন্দিন জীবনের সাথে জড়িত বাড়িঘরআসবাবপত্র সবই আমরা মাপিএই মিটার এককেদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত মিলিমটারস্কেলে যন্ত্রপাতির সূক্ষতা মাপা হতমিলিমিটার এর ছোট কোনকিছু নিয়ে চিন্তা ভাবনারঅবকাশ ছিলনা কিন্তুদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পরে,বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে একনতুন যুগের সূচনা হল সেমিকণ্ডাকটরতার পথযাত্রা শুরু করলআর এর শুরুটা হল,ট্রানজিস্টর আবিষ্কার দিয়ে তখনমাইক্রোমিটার একক দিয়ে আমাদেরচিন্তভাবনা শুরু হলবলা যায় যাত্রা শুরুহল, মাইক্রোটেকনোলজির

এর পরে টেকনোলজিএগুতে লাগলো প্রচন্ড গতিতে নানাজিনিসপত্র, যার মধ্যে টেলিভিশন,রেডিও, ফ্রিজ ইত্যাদি ইত্যাদি আরতা কিভাবে আরো ছোটকরা যায় তা নিয়েইপ্রচন্ত যুদ্ধ শুরু হয়েগেল কোনকম্পানি কত ছোট আকারেরএই সমস্ত ভোগ্য জিনিসআমাদের কাছে পৌঁছাতে পারবে,তার প্রতিযোগীতা শুরু হলআর এই সমস্ত ব্যাপারটাসম্ভব হল, সেমিকণ্ডাকটর সংক্রান্তপ্রযুক্তির কল্যাণে প্রথমদিকের রেডিও কিংবা টিভিরআকার দেখলে আমাদের এখনহাসি পাবে এতবড় বড় জিনিস মানুষব্যাবহার করত কিভাবে? সেইপ্রশ্নটি হয়তো এসে দাড়াবে কিন্তুএখন বাজারে দেয়ালে ঝুলাবারজন্য ক্যালেন্ডারের মত পাতলা টিভিএসেছে সামনেহয়তো আরো ছোট আসবে

১৯৮০ সনে IBM এরগবেষকরা প্রথম আবিষ্কার করেন
STM(ScanningTunneling Microscope) এইযন্ত্রটি দিয়ে অণুর গঠনপর্য়ন্ত দেখা সম্ভবএই যন্ত্রটির আবিষ্কারই ন্যানোপ্রযুক্তিকে বাস্তবে রূপ দিতে সক্ষমহয়েছে কিভাবেকাজ করে এই STMএই যন্ত্রে খুব সূক্ষ পিনেরমত সুচাল টিপ আছেএবং তা যখন কোনপরিবাহী বস্তুর খুব কাছেনিয়ে যাওয়া হয়, তখনতা থেকে টানেলিং নামেখুব অল্প পরিমাণে বিদ্যুৎপরিবাহিত হয় এবংএই বিদ্যুৎ এর পরিমাণ দিয়েইসেই বস্তুটির বাহিরের স্তরের অণুর চিত্রতৈরি করা হয়তবে এই STM এর ক্ষেত্রেযা দেখতে চাইবো তাকেঅবশ্যই বিদ্যুৎ পরিবাহী হতে হবেকিন্তু বিদ্যুৎ অপরিবাহীর অণুর গঠন কিভাবেদেখা যাবে? না মানুষবসে থাকেনি অসম্ভবকেসম্ভব করেই মানুষ যেভাবেএতদূর এসেছে, তেমনি ভাবেএই অসম্ভবকে সম্ভব করা গেলAFM দিয়ে STM এর ক্ষেত্রেটানেলিং বিদ্যুৎ দিয়ে কাজ করাহয় এবং AFM দিয়ে সুক্ষ্ম পিনদিয়ে অণুর গঠন দেখাসম্ভব

ইতিহাস:

১৯৮৯ সনের নভেম্বরের তারিখ খুব সম্ভবতন্যানোটেকনলজির জন্য একটা অন্যতমস্মরণীয় দিন হিসবে বিবেচিতহবে এইদিনে ক্যালিফোর্নিয়ার IBM এর Almaden Research Center Don Eigler এবং Erhard Schweizer ৩৫ টি Xenon অণুদিয়ে IBM এর লগোটি তৈরিকরেছিলেন সেইদিনইপ্রথম অণুকে ইচ্ছেমত সাজিয়েপছন্দমত কিছু তৈরি করাসম্ভব হয় মানুষের পক্ষে তাইদিনটি হয়তো আজ হতেঅনেক বছর পরে ন্যানোটেকনলজিরক্ষেত্রে প্রথম মাইল ফলকহিসাবে পরিগণিত হবে এইদিনইপ্রথম মানুষ প্রকৃতির সবথেকেগুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি অণুর কাঠামোকেভাঙতে সক্ষম হয়েছিলঅণুর গঠনকে ইচ্ছেমত তৈরিকরে অনেক কিছু করাসম্ভব একবিশাল সম্ভাবনার দ্বার মানুষের সামনেউন্মোচিত হল ব্যাপারটাএকটু বুঝিয়ে বলা যাকশুধু মাত্র অণুর কাঠামোগতপার্থক্য হবার কারণেই কয়লাএত সস্তা আর হীরকএত দামী দুটিজিনিসের মূল উপাদান হলকার্বণ শুধুমাত্র অণুর গঠনের পার্থক্যেরকারণে হীরক পৃথিবীর সবথেকেশক্ত দ্রব্য আর কয়লাকিংবা পেন্সিলের শীষ নরম

কিন্তু ন্যানোপ্রযুক্তির কল্যাণেযদি আমরা ইচ্ছেমত এইঅণুকে সাজাতে পারি, তাহলেচিন্তা করে দেখুন ব্যাপারটা আমরাইচ্ছেমত যা ইচ্ছে তাইতৈরি করতে পারবএছাড়া ১৯৯৯ সনে Cornell বিশ্ববিদ্যালয়েরWilson Ho এবং তার ছাত্র Hyojune Lee অণুকেজোড়া লাগানোর প্রক্রিয়া প্রদর্শন করেন এতদিনপর্যন্ত অণু-পরমানুর সংযোগশুধু মাত্র রাসয়নিক বিক্রিয়ারমাধ্যমেই সংগঠিত হতকিন্তু ন্যানোটেকনলজির মাধ্যমে অণু-পরমানুক ভেঙেকিংবা জোড়া লাগিয়ে অনেককিছুই করা সম্ভবনার দ্বারখুলে দিল

Blogger templates

.
Recommended Post Slide Out For Blogger