সেরা রোমন্টিক ছবি : ডিয়ার জন (২০১০)

|

ডিয়ার জন ২০১০ সালে মুক্তি পাওয়া একটি রোমান্টিক ধারার ছবি যেখানে জন নামে আমেরিকান এক সৈনিকের যুদ্ধে যাওয়ার ঘটনা এবং সাভানাহ নামে এক সুন্দরী তরুনীর সাথে জনের প্রেমের সুন্দর বিশ্লেষন ও চিঠি আদান প্রদানের মাধ্যমে পরিচালক দক্ষতার সাথে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। চিঠি এ ছবির একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে দর্শকের হৃদয় ছুয়েছে। যুদ্ধের ময়দানে বসে প্রেমিকার চিঠির জন্য প্রতিক্ষা এবং চিঠির উত্তর পাবার প্রতিক্ষায় প্রেমিকার বসে থাকা সত্যিই এ ছবিতে ভিন্নধর্মী একটি মাত্রা যোগ করেছে । চেনিং টেট্যাম (Channing Tatum) এবং আমান্ডা সেইফ্রাইড (Amanda Seyfried) এর অসাধারন অভিনয় দর্শক এর হৃদয় ছুয়ে যাবে নিঃসন্দেহে। ডিয়ার জন ছবিটি মুক্তি পায় ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের ৫ তারিখে নর্থ আমেরিকায়। 


আভাটার ছবি দেখে সারা দুনিয়া যখন ডিজিটাল জোয়ারে ভাসছিল ঠিক তখন দুই তরুন-তরুনীর প্রেম-ভালবাসা, নীল খামে চিঠি পোস্ট, লুকিয়ে সেই চিঠি পড়া, প্রতিউত্তর দেওয়া সবকিছু মিলে ডিজিটাল কৃত্রিম ভালবাসার তুলনায় মানবিক ভালবাসার অপুর্ব একটি সংযোজন ডিয়ার জন। 
এ ছবিটির নাম ভুমিকায় অভিনয় করেছেন জন (চেনিং টেট্যাম -Channing Tatum) এবং সাভানাহ চরিত্রে মনোমুগ্ধকর অভিনয় করেছেন (আমান্ডা সেইফ্রাইড - Amanda Seyfried)। নিকোলাস স্পার্ক এর ডিয়ার জন উপন্যাস অবলম্বনে এই ছবিটি পরিচালনা করেছেন - লেসি হালস্ট্রোম (Lasse Hallström) । এক সৈনিকের প্রেমে পড়ার গল্প এবং ৯/১১ পরবর্তী আমেরিকার বিভিন্ন দেশের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া ও দেশপ্রেমিক এক সৈনিকের দেশের প্রয়োজনে যুদ্ধে জাপিয়ে পড়ার ঘটনা এ ছবিতে আমেরিকান সৈন্যদের দেশ প্রেমের পরিচয় ফুটিয়ে তুলেছে। আমেরিকান সৈন্যদের যুদ্ধের ময়দানে গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়ার দৃশ্য দেখলে দর্শক আপনার অস্কার বিজয়ী হার্ট লকার ছবিটির কথা অবশ্যই মনে পড়বে। যাইহোক কাহিনীর প্রয়োজনে ডিয়ার জন ছবির জনের গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়ার দৃশ্য দর্শককে একটু হলেও ব্যথিত করবে ।


কাহিনীঃ
জন টাইরি (চেনিং টেট্যাম -Channing Tatum) আমেরিকান সেনাবাহিনীর স্পেশাল ফোর্সের একজন তরুন সার্জেন্ট। শরীরে অনেকগুলো ক্ষত নিয়ে সার্জেন্ট জন মিলিটারি ক্যাম্পে শুয়ে তার ছেলেবেলার কয়েন সংগ্রহের বিভিন্ন স্মৃতি নিয়ে ভাবছেন । ২০০১ সালে জন যখন ছুটিতে বাড়িতে আসে ঠিক সে সময়ে কলেজ পড়ুয়া সাভানাহ বসমেত্মর ছুটিতে বেড়াতে আসে এবং জনের সাথে কাকতালিয় ভাবে দেখা হয়। সাভানাহর হ্যান্ডব্যাগ পানিতে পড়ে গেলে জন পানিতে ঝাপ দিয়ে তা তুলে নিয়ে সাভানাহকে দেয়। সেই থেকে সাভানাহ ও জনের পরিচয়, জানাশোনা, পার্টিতে যাওয়া এবং প্রেম। জন স্বাভাবিক ভাবেই সাভানাহ এর পরিবারের সবার সাথে পরিচিত হয় এবং সাভানাহদের প্রতিবেশী টিম ইডেন (হেনরি থমাস) ও তার অটিস্টিক শিশু এলান এর সাথে পরিচিত হয়। যদিও এলানের যাবতীয় দেখাশোনা সাভানাহ করে থাকে।
দর্শক ছবিতে দেখতে পাবেন - সাভানাহ একদিন জনের বাবার (রির্সাড জেনকিনস) সাথে দেখা করতে যায়। জনের বাবার কয়েন সংগ্রহ করা একমাত্র নেশা। কয়েন নিয়ে গবেষনায় তিনি স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকেন । জনের মায়ের কথা জনের স্মৃতিতে নেই। জনের বাবা সম্পর্কে সাভানার মমত্মব্য জনের জন্য কিছুটা কষ্টদায়ক কারন সাভানাহ এর মতে জনের বাবা এলানের মতো অটিস্টিক। 


এদিকে জনের ছুটি প্রায় শেষ। জন সাভানার কাছে একটি চিরকুট লিখে টিমের কাছে রেখে আসে। জনের লেখা চিরকুট সাভানাহ এর হাতে পৌঁছে। জনের ছুটিতে যাবার আগে শেষ একদিন সাভানাহ ও জন একসাথে ঘুরে ফিরে দিন কাটায়।
জন ও সাবানাহ এর বিদায় বেলার দৃশ্য দর্শক আপনাকে কিছুটা হলেও কষ্ট দেবে কারন যেতে নাহি দিবো হায় তবু বিদায় দিতে হয় এই ভেবে। যদি কোন পাঠকের প্রিয়জন দেশ ছেড়ে বিদেশে অবস্থান করে থাকে তবে তাদের বিদায় বেলার শেষ দৃশ্যের কথা অবশ্যই মনে পড়বে, কষ্ট লাগবে। জন যখন দেশ ত্যাগ করে দায়িত্বে চলে যায় তখন সাভানাহ ও জনের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার একমাত্র মাধ্যম হয় হাতে লেখা চিঠি। পরিচালক এখানে যোগাযোগের মাধ্যম চিঠি দেখিয়ে ছবির নান্দনিক মাত্রা বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছেন। একটি চিঠি পাওয়ার পর আরেকটি চিঠির প্রতিক্ষা। যুদ্ধ ক্ষেত্রে হেলিকাপ্টার থেকে প্যারাসুটের মাধ্যমে চিঠির বসত্মা নিক্ষেপ, লুকিয়ে জনের চিঠি লেখা ও পড়া সবকিছু ভেবে দর্শক আপনার জীবনে ঘটে যাওয়া কোন স্মৃতি আপনাকে হয়তো পুলকিত করবে নয়তো চোখের কোনে জড়ো করবে বিন্দু বিন্দু জল। অন্যদিকে চিঠির অপেক্ষায় সাভানাহ এর ঘন ঘন পোস্ট মাস্টারের কাছে ছোটাছুটি, চিঠি পোস্ট করার ব্যসত্মতা সবকিছুই ডিজিটাল যুগে মানবিক ভালবাসারা এক অপূর্ব বর্হিপ্রকাশ। জন ভাবে এ বছরই তার স্পেশাল ফোর্সে থাকার শেষ বছর কিন্তু ৯/১১ এর পরবর্তী ঘটনা দ্রুত পাল্টে যেতে থাকে। মাত্র এক সপ্তাহের ছুটিতে জন বাড়িতে ফিরে আসে। আমেরিকার বর্তমান পেক্ষাপটের কথা ভেবে জন স্পেশাল ফোর্সে আবার যোগদান করতে চায় এবং সাভানাহ এর পরামর্শ চায় কিন্তু সাভানাহ রাজি হতে চায় না। কিন্তু জনকে যেতেই হয় আমেরিকার ৯/১১ পরবর্তী ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলায়। 

নতুন মিশনে জনের ২ বছর কঠিন সময় পার করতে হয়। কারন আমেরিকান সৈন্যরা সন্দেহজনক বিভিন্ন দেশের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত। এখানেও জন সাভানাহ এর চিঠির প্রতিক্ষায় চেয়ে থাকে, উত্তর পাঠায়, লুকিয়ে চিঠি পড়ে। যুদ্ধের ময়দানে যেনো জনের বেচে থাকার একমাত্র অবলম্বন সাভানাহ এর হাতে লেখা নীল খামে আসা একটি সুন্দর চিঠি। তেমনী নীল খামে একটি চিঠি একদিন আসে সার্জেন্ট জনের নামে। জন চিঠিটি পেয়ে ভীষন খুশি এবং মূহুত্বেই পড়তে যায়। কিন্তু এ চিঠিটি সাভানাহ এর চিঠি হলেও জন চিঠিটি পড়ে ভীষন কষ্ট পায়। জনের জীবন খাতার সব হিসেব নিকেস শূন্য হয়ে যায়। জন বিষন্নতায় ভোগে কারন জন ভাবে সাভানাহ তখন তার প্রতিবেশী রেন্ডির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। একটি চিঠি জনের জীবনকে ভীষনভাবে নাড়া দেয়, জন দিশেহারা হয়ে যায়। সাভানাহ এর সব চিঠি পুড়িয়ে ফেলে। বিমর্ষ জন দায়িত্ব্যে সচেতন থেকে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করে কখনো সরাসরি আক্রমন আবার পাল্টা আক্রমন। এমনি এক সরাসরি যুদ্ধে জন শত্রু পক্ষের বুলেটে ক্ষতবিক্ষত হয় এবং হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যায় সুস্থ হয়ে উঠে। পরবর্তীতে জন দীর্ঘ দিনের ছুটিতে দেশে ফিরে আসে তার বাবার কাছে। যদিও সেদিন গুলো ছিলো জনের জন্য ভীষন কষ্টের কারন সাভানাহ এর অনুপস্থিতি।

জন আবারও আর্মি মিশনে পরবর্তী ৪ বছরের জন্য যোগদান করে এবং ইরাক, আফগানিস্থানসহ বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহন করে। হঠাৎ খবর আসে জনকে দেশে ফেরত যেতে হবে কারন তার বাবা মৃত্যু পথযাত্রী। বাবাকে দেখতে জন দেশে ফিরে আসে এবং হাসপাতালে তার বাবাকে দেখতে যায়। ডাক্তার জানায় জনের বাবা স্ট্রোক করেছেন এবং তীব্র ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। জন তার বাবার মৃত্যুর শেষ দিনগুলোতে পাশে থাকে এবং একটি চিঠি লিখে বাবাকে উদ্দেশ্য করে যেখানে জন মুল কয়েন পাওয়ার গল্প বলে যায় । বাবাকে নিয়ে জনের স্মৃতিচারন জনের সাথে সাথে দর্শকের চোখের পানি একাকার হয়ে যেতে চায়। কারন জনের বাবা মারা যায়। জনের পৃথিবীতে আজ জন বড় একা কারন শেষ পর্যন্ত তার বাবাও তাকে ছেড়ে চলে গেছে। অসহায় জনের মনে পড়ে যায় সাভানাহর কথা। 

জন আবার সাভানাহ এর মুখোমুখি হতে সাভানাহকে দেখতে যায়। সাভানাহকে দেখে জন অবাক হয়ে যায় এই সেই সাভানাহ যাকে ছাড়া জনের পৃথিবীতে দ্বিতীয় কেউ ছিলো না। সাভানাহ এর বাড়িতে যেয়ে জন আবিস্কার করে সাভানাহ বিয়ে করেছে টিমকে তার ধনী বন্ধুটিকে নয়। সাভানাহ বলে যায় - টিম ক্যানসারে আক্রান্ত, তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে। তাছাড়া টিমকে বেচেঁ থাকতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ নিতে হবে যা টিমের সাধ্যের বাইরে। জন হাসপাতালে টিমের সাথে দেখা করতে যায়, টিম বলে যে সাভানাহ এখনও জনকে অনেক ভালবাসে। শুধুমাত্র এলানের দেখাশোনা করার জন্য টিম সাভানাহকে বিয়ে করেছে। যদিও টিম জানতো জন সাভানাহকে অনেক ভালবাসে। টিম তার ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে।

সাভানাহ আবারও জনের সাথে নতুন জীবন শুরু করতে চায়। সাভানাহ বলে - টিম তোমার সাথে খুব শীগ্রই আবার দেখা হবে, প্রতিউত্তরে সাভানাহ জনের কাছে একই বাক্য আশা করে কিন্তু জন সাভানাহকে বিদায় বলে চলে যায়। সাভানাহ বুঝতে পারে সে জনকে হারিয়েছে। সাভানার চোখের জল সে ভাষাই বুঝিয়ে দেয়। ক্রোধে জন তার চোখের জল ধরে রাখতে পারে না। কারন সাভানাহকেও জন হারিয়েছে। আজ শুধু দুজনার দুটি পথ।

জন আবারও আর্মিতে ফিরে যাওয়ার পূর্বে তার বাবার জমানো সব মুদ্রা বিক্রি করে টিমের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেয় শুধুমাত্র মুল কয়েনটি ছাড়া কারন সে কয়েনটির সাথে জনের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। যুদ্ধের ময়দানে জন সে কয়েনটি দিয়ে তার সহযোদ্ধাদের সাথে টস করে যুদ্ধ করতে এগিয়ে যায়। হঠাৎ একদিন জন সাভানাহ এর একটি চিঠি পায়। সে চিঠিতে জনকে সাভানাহ টিমের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করার জন্য ধন্যবাদ জানায়। যদিও টিম চিকিৎসার ২ মাস পর মারা যায়। সাভানাহ এখন জানে না জন এখন কোথায়, কি করে, কেমন আছে ? সাভানাহ এ প্রশ্নগুলো করতে চায় কিন্তু সাভানাহ মনে করে পূর্বের ন্যায় সাভানাহ এ প্রশ্নগুলো করার সব অধিকার হারিয়েছে।

ডিয়ার জন ছবিটির শেষ দৃশ্যে দেখা যায়, জন তার আর্মি চাকরী ছেড়ে দেয়। সে একটি সাইকেলে চড়ে আমেরিকার একটি শহরে আসে এবং সাইকেলের চেইন ঠিক করার চেষ্টা করে। পাশেই একটি ক্যাফে বসে থাকা সাভানাহ জনকে দেখতে পায়। জনকে দেখে সাভানাহ এগিয়ে আসে, জনের সাথে আবার নতুনভাবে সম্পর্কের শুভ সুচনা হয়। এভাবেই শেষ হয় ডিয়ার জন ছবির মানবিক ভালবাসার একটি গল্প যা দর্শক হৃদয়কে ছুয়ে যাবে। ছবিটিতে রয়েছে হৃদয় ছোয়া কিছু গান যা অবশ্যই দর্শক মনে ভাললাগা তৈরী করবে। ভালবাসার জয় হোক।



Directed by : Lasse Hallström 
Produced by : Marty Bowen, Wyck Godfrey, Ryan Kauvanaugh 
Written by : Jamie Linden, Nicholas Sparks (Novel) 

Starring: 
Channing Tatum
Amanda Seyfried
Henry Thomas
Scott Porter
and Richard Jenkins 

Music by : Deborah Lurie 
Cinematography : Terry Stacey 
Editing by : Kristina Boden 
Studio : Relativity Media 
Distributed by : Screen Gems (USA)
Release date(s) : February 5, 2010 
Running time : 107 minutes 
Country : United States 
Language : English 
Budget : $25 million 
Gross revenue : $112,076,256

Blogger templates

.
Recommended Post Slide Out For Blogger