সময় পরিভ্রমণ ও টাইম মেশিন!!!

|
Add caption
সময় পরিভ্রমণ কী সম্ভব-বিশেষত অতীতে ফিরে যাওয়া, এ প্রসঙ্গটি এখন আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের তাত্ত্বিক গবেষনায় অন্তর্ভুক্ত। বলতে কি, টাইম মেশিন উদ্ভাবনের যে জোর প্রচেষ্টা বিজ্ঞানী ও প্রাযুক্তিকদের মধ্যে চলছে তার প্রাণোদনা হিসেবে কাজ করছে সময় পরিভ্রমণের দুর্বার আকাঙ্ক্ষা। আচ্ছা কেমন হতো কেউ যদি তার পিতার জন্মের পূর্বেই পিতামহকে হত্যা করতে পারতো? পদার্থবিজ্ঞানে একে বলা হয় গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্স। আথবা কেউ যদি অতীতে ফিরে গিয়ে পশ্চাদপদ সভ্যতাকে আজকের প্রযুক্তিগত আগ্রগতির প্রয়োগে ঢেলে সাজাতে পারতো। আমরা জানি, বাস্তবে এটা সম্ভব নয়। আথবা বাস্তবকালে এ তত্ত্বের প্রয়োগ একেবারে অসাধ্য কিংবা পদার্থবিজ্ঞানের তাত্ত্বিক জ্ঞান এখনও সেই স্তরে উত্তীর্ণ হয়নি। তবে আমাদের মস্তিষ্ক এক্ষেত্রে খানিকটা টাইম মশিনের মতো কাজ করে।
যেমন শৈশবের কোন স্মৃতি হুবুহু মস্তিষ্ক ধারণ করে রাখে এবং সেই স্মৃতি বার্ধকেও আমাদের শৈশবে নিয়ে যায়। যৌবনের কোন প্রেমের ঘটনাও তেমনি আমদের অতীত ভ্রমণে সহায়তা করে। এর ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি, মানবমস্তিষ্কও এক ধরণের টাইম মেশিন! তবে বায়োলজিক্যাল এই টাইম মেশিন কৃ্ত্রিম টাইম মেশিন নির্মাণের ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে পারে। বলতে কি, টাইম মেশিন তৈরির যে প্রচেষ্টা পদার্থবিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের মধ্যে চলছে, তার সঙ্গে নিউরোবিজ্ঞানের আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের মিথস্ক্রিয়া এক্ষেত্রে বিস্ময়কর সাফল্য আনতে পারে। সুতরাং আধুনিক টাইম মেশিন তৈ্রির আদর্শ মডেল হল মানবমস্তিষ্ক। সম্প্রতি নিউরাল কম্পিউটার উদ্ভাবনের যে গবেষনা কিংবা রোবটকে কৃ্ত্রিম বুদ্ধি সংযোজনের যে প্রচেষ্টা, সেখান থেকেও টাইম মেশিন তৈরির মশলা সংগৃহীত হতে পারে। এমনকি নিউরাল কম্পিউটার উদ্ভাবনের সঙ্গে নিউরাল টাইম মেশিন উদ্ভাবনের গবেষণাও চালানো যেতে পারে এবং যান্ত্রিক যেকোন মডেলের থেকে টাইম মেশিনের নিউরাল সংস্করণ হতে পারে আরো প্রাণবন্ত, সংবেদী এমনকি প্রায় ইচ্ছাচালিত।
Add caption


এদিকে টাইম মেশিনের সবচেয়ে বড় মডেল হচ্ছে আমদের মহাবিশ্ব। আমরা জানি, আলো এক সেকেন্ডে ৩,০০,০০০ কি.মি. হিসেবে, এক বছরে যেতে পারে ১০ ট্রিলিয়ন কি.মি. বা ৬ ট্রিলিয়ন মাইল। একে এক আলোকবর্ষ বলা হয়। সুতরাং আলোকবর্ষ সময়ের একক নয়, দুরত্বের একক। চাঁদের আলো পৃ্থিবীতে পৌঁছাতে সময় লাগে ১ সেকেন্ডে। এর অর্থ আমরা পৃ্থিবীতে অবস্থান করে এক সেকেন্ড পূর্বের চাঁদকে দেখতে পাই। আবার সূর্য্যের আলো পৃ্থিবীতে আসতে সময় লাগে ৮ মিনিট ৪ সেকেন্ড। তার মানে এক্ষেত্রে আমরা ৮ মিনিট ৪ সেকেন্ড পূর্বের সূর্য্যেকে দেখতে পাই। সিরিয়াস নামের সবচাইতে উজ্জ্বল যে নক্ষত্রটি আমরা দেখি রাতের আকাশে, তার দূরত্ব পৃ্থিবী থেকে ৮ আলোকবর্ষ। সুতরাং রাত ১০ টায় পৃথিবীতে আবস্থান করে, ৮ আলোকবর্ষ পূর্বের নক্ষত্রকে দেখতে পাই মাত্র। ওরিয়ননেবুলার দূরত্ব পৃ্থিবী থেকে ১৫০০ আলোকবর্ষ। পৃ্থিবীতে রোমান সাম্রাজ্য পতনের সময় ওরিয়ননেবুলা যে আলো বিকিরণ করেছিল, তা-ই একবিংশ শতাব্দী তথা তৃ্তীয় সহস্রাব্দের প্রারম্ভে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির দূরত্ব পৃ্থিবী থেকে ২.৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ। অর্থাৎ আদি মানবেরা যে সময়ে সামনের দু’টো পা-কে হাতে পরিণত করে, চারপায়ে হাঁটার পরিবর্তে পেছনের দু’পায়ে হাঁটতে শুরু করেছিল, সেই সময়ে এন্ড্রোমিডা যে আলো বিকিরণ করেছিল, তা-ই হোমো সেপিয়েন্সের উত্তরপুরুষ হিসেবে আমরা আজকে প্রত্যক্ষ করছি। ১০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের কোন গ্যালাক্সি প্রত্যক্ষ করে মানে ১০ মিলিয়ন বছর পূর্বের গ্যালাক্সিকে প্রত্যক্ষ করা। ১০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের গ্যালাক্সিটি ঠিক এই মুহূর্তে যে আলো বিকিরণ করছে, তা দেখবে এখন থেকে ১০ মিলিয়ন বছর পরে আবির্ভূত আমদের বুদ্ধিমান উত্তরপুরুষরা। কিন্তু ততোদিনে পৃথিবী নামক গ্রহটিতে প্রাণের আস্তিত্ত্ব বিশেষত মানবজাতি থাকবে কিনা তা-ই সন্দেহ। এদিকে ১ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের কোন গ্যালাক্সিগুচ্ছ পর্যবেক্ষণ করার অর্থ সেই গ্যালাক্সিগুচ্ছ ১ বিলিয়ন বছর পূর্বে যে আলো বিকিরণ করেছিল, তা পর্যবেক্ষণ করা। সুতরাং মহাবিশ্বের কী পরিমাণ আমরা পর্যবেক্ষণ করতে আমরা সক্ষম হবো, তা আলোর গতি দ্বারা সীমাবদ্ধ। অথবা বলা যেতে পারে তা আলোর গতির সাথে সম্পর্কিত। মহাবিশ্বের বয়স যদি ২০ বিলিয়ন হয়, তবে ২০ বিলিয়নের অধিক আলোকবর্ষ দূরের গ্যালাক্সি কিংবা গ্যালাক্সিগুচ্ছ অথবা গ্যালাক্সিগুচ্ছসমূহের গুচ্ছ থেকে আলো আমাদের পৃথিবীতে এসে পৌঁছানোর মতো সময় এখনো হয়ে ওঠেনি। এক্ষেত্রে বলা যায়, পৃথিবী থেকে আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্বের সব ডিরেকশনে প্রসারণ ঘটছে ২০ বিলিয়ন আলোকবর্ষ। এখানে একটি তাত্ত্বিক প্রসঙ্গ এসে যায়। আর তা হলো, আমদের দৃশ্যমান মহাশূন্যের সাথে পুরো মহাবিশ্বের সংযোজন ঘটেনি। অর্থাৎ, মহাবিশ্বের বিশাল অংশ আমদের দৃশ্যমান জগতের বাইরে অবস্থিত।

যাইহোক, বিজ্ঞানীরা যেমনি নিউরাল কম্পিউটার উদ্ভাবনে মানবমস্তিষ্ক নিয়ে গবেষনা করছেন, তেমনি কসমিক টাইম মেশিন তৈ্রির দুঃসাহসিক আভিযানেও অংশ নিতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, টাইম মেশিন উদ্ভাবন করতে গিয়ে মস্তিষ্ক এবং মহাবিশ্ব নিয়ে নিউরোবিজ্ঞানী এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের যে গবেষনা পরিচালিত হবে, তার মধ্যদিয়ে মহাবিশ্ব তথা মানবমস্তিষ্ক সম্পর্কে অনেক মৌলিক তত্ত্ব সৃষ্টি সম্ভব হবে। কিন্তু নিউরাল টাইম মেশিন ও কসমিক টাইম মেশিন ব্যাবহার করে আমরা কেবল অতীত পরিভ্রমণ করতে পারবো, কিন্তু আমদের ভবিষ্যত ভ্রমণের কি হবে? টাইম মেশিনে চড়ে আমরা কি দূর ভবিষ্যতে যেতে পারবো না? আমরা কি দেখতে পারবোনা আমাদের উত্তরপুরিষদের? কেমন হবে তাদের সাহিত্য ও শিল্পকলা, প্রেম-রোমান্স? না, টাইম মেশিনের ধারণা আপাতত কিছুই বলছে না। কিন্তু বিজ্ঞানের গবেষনা হয়ত দূর ভবিষ্যতে এর যথাযথ ব্যাখ্যা প্রদানে সক্ষম হবে।

Blogger templates

.
Recommended Post Slide Out For Blogger