বামন প্রাণীদের গল্প

|
ছোট্ট কুকুর “ডাকি”
গিনেজ বুকে নাম লেখানো পৃথিবীর সবচাইতে ছোট্ট কুকুরটির নাম ‘ডাকি’। এর ওজন মাত্র ১.৪ পাউন্ড অর্থাৎ কিনা ১ কেজিরও কম। আর দৈর্ঘ্যে মাত্র ৪.৯ ইঞ্চি অর্থাৎ দাগ টানার জন্য তোমরা যে ছোট ছোট ৬ ইঞ্চি স্কেল ব্যবহার করো, তারচেয়েও এক ইঞ্চি কম। তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতেই পারছো, কত্তো ছোট্ট আকারের কুকুর এই ডাকি। তবে ছোট্ট হলেও এর চেহারাটা কিন্তু বেশ রাগী রাগী। এই যাঃ, ডাকি আসলে কোন জাতের কুকুর সেটা বলতেই তো একদম ভুলে গিয়েছি! ডাকি ‘চিহুয়াহুয়া’ প্রজাতির কুকুর। নামটা শুনে কেমন আফ্রিকান মনে হচ্ছে, তাইনা? তবে আফ্রিকার সাথে কিন্তু এর কোন সম্পর্কই নেই। বরং ডাকি’র বাস হচ্ছে আমেরিকার ম্যাসাচুটস-এ। আর মজার কথা কি জানো? পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট কুকুর হওয়ার জন্য কিন্তু ডাকি’কে রীতিমতো প্রতিযোগিতা করতে হয়েছিলো। ৫.৪ ইঞ্চি লম্বা স্লোভাকিয়ার ‘ডানকা’ নামের আরেকটা কুকুরকে হারিয়ে তবেই গিনেজ বুকে নাম লেখাতে হয়েছে একে। তবে ডাকিই কিন্তু সবচেয়ে ছোট কুকুর নয়। আসলে ডাকি হচ্ছে জীবন্ত কুকুরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র। এ যাবৎকালের মধ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্র কুকুরটি ছিলো একটি ইয়র্কশায়ার টেরিয়ার প্রজাতির বামন কুকুর। শুনলে তাজ্জব হয়ে যাবে যে এই কুকুরটি লম্বায় ছিলো মাত্র ২ .৮ ইঞ্চি।
সাপ যখন কয়েনের সমান!
সাপের কথা শুনলেই তো গা কেমন জানি ঘিনঘিন করে ওঠে, তাই না? তোমাদের এরকম হয় কিনা জানি না। তবে আমার কিন্তু সাপ দেখলে সত্যি কেমন জানি লাগে। দেখলেই মনে হয় যেন ফণা তুলে এখুনি কামড়াতে আসবে। তবে লেপ্টোটাইফলপস কার্লে প্রজাতির সাপ দেখলে কিন্তু এমনটি একদমই মনে হয় না। কেননা এরা এতোটাই ছোট যে এরা কামড় দেবে এমন কথা ভাবাই যায় না। অবশ্য কামড় দিলেও সমস্যা নেই। কেননা এদের বিষই থাকে না। লেপ্টোটাইফলপস কার্লে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট প্রজাতির সাপ। এই প্রজাতির একটা পূর্ণবয়স্ক সাপ ৪ ইঞ্চির বেশি লম্বাই হয় না। তাহলেই বোঝো কত্তোখানি ছোট্ট এরা। আরেকটু ভালোমতো বুঝতে পারবে এটা শুনলে যে, এরা দেখতে পুরোদস্তুর ন্যুডলস এর মত আর প্যাঁচালে একটা ৫ টাকার কয়েনের সমান হবে! পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্র প্রজাতির এই সাপ আবিষ্কার করেন ব্লেয়ার হেজেস। তিনি এদেরকে খুঁজে পান ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের বার্বাডোস দ্বীপে। আসলেও ব্লেয়ার হেজেসের দৃষ্টিশক্তি খুবই ভালো ছিলো, নইলে কী আর এই পুঁচকে সাপকে খুঁজে পাওয়া যায়! এখনো শুধুমাত্র বার্বাডোসেই এই সাপ দেখতে পাওয়া যায়।
বামন ঘোড়া
পল এবং ক্যে গসেলিং দম্পতি দীর্ঘদিন ধরে বামন প্রজাতির ঘোড়া উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা করে আসছেন। আর এ কাজে তাদের সাফল্যও অনেক। বেশ কয়েকটি ছোট প্রজাতির ঘোড়া উদ্ভাবন করেছেন তারা। তাদের কাছেই জন্ম নিয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট্ট ঘোড়াটি। তারা এর নাম দিয়েছেন ‘থাম্বলিনা’। সত্যি সত্যিই কিন্তু থাম্বলিনা একটি বামন আকৃতির ঘোড়া। পাঁচ বছর বয়স হয়ে গেছে, তবু বেচারা ১৭ ইঞ্চির বেশি লম্বাই হতে পারেনি! ও আচ্ছা, বলতে ভুলে গেছি, এটি কিন্তু একটা মাদী ঘোড়া,মানে মেয়ে ঘোড়া।
‘মি. পিবলস’ এর সাথে পরিচয়
এবার তোমাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি মি. পিবলস এর সাথে। কি, চমকে গেলে? ভাবছো এই পশুপাখিদের মাঝখানে মি. পিবলসটা আবার কোত্থেকে আসলো? আরে, মি. পিবলস কোন মানুষের নাম নয়। এটি আসলে একটি ছোট্ট আদুরে বিড়ালের নাম। এতোই ছোট, ২০০৪ সালে গিনেজ বুকে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট বিড়াল হিসেবে স্থান পেয়েছে মি. পিবলস নামের এই বিড়ালটি। এটি উচ্চতায় ৬.১ ইঞ্চি আর লম্বায় ১৯.২ ইঞ্চি অর্থাৎ কিনা ঐ যে খুদে কুকুর ‘ডাকি’র কথা বললাম না, ওর চেয়ে খানিকটা বড়ো। আর এর ওজন ৩ পাউন্ড, মানে মোটে ১.৫ কেজি! তবে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্র বিড়াল হলেও মি. পিবলস’র বয়স কিন্তু কম নয়। এরই মধ্যে দু’বছর বয়স হয়ে গিয়েছে তার। অর্থাৎ বিড়াল জাতির মধ্যে তাকে রীতিমতো ‘মুরুব্বী’ বলা চলে।
পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম মাছ
২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসে পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম মাছটি আবিষ্কার করা হয় ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে। সত্যি কথা বলতে এই মাছটিই পৃথিবীর সবচাইতে ক্ষুদ্র ‘ভারটেব্রাটা’ অর্থাৎ কিনা মেরুদণ্ডী প্রাণী। অর্থাৎ, যাদের মেরুদণ্ড আছে, তাদের মধ্যে সবচাইতে ছোটো। মাছেদের মধ্যেও আবার পরিবার আছে, একই রকম মাছগুলোকে একই পরিবারে রাখা হয়। এই পুঁচকে মাছটি কার্প পরিবারের একজন সদস্য। তবে এই মাছের নামটা কিন্তু বেশ বিদঘুটে। পেডোসাইপ্রিস প্রোজেনেটিকা। এটি অবশ্য বৈজ্ঞানিক নাম। তবে এর কোন সহজ ডাকনাম এখনো পর্যন্ত দেয়া হয়নি। মানে তুমি ওকে তোমার ইচ্ছেমতোন একটা ডাকনাম দিয়ে ডাকতে পারো। সেই নামে অবশ্য অন্য ডাকবে কিনা, তা বলতে পারি না!
বামন গরু
সামনেই আসছে কোরবানির ঈদ। এই ঈদে তো নিশ্চয়ই গরু কোরবানি দিবে। আর কোরবানির গরু নিয়ে সবচেয়ে মজা হলো, এলাকায় কার গরুটা সবচেয়ে বড়ো তাই নিয়ে গবেষণা করা। কিন্তু বলতে পারবে, সবচেয়ে ছোটো গরু কোনটা? গরুটির জন্ম হয়েছে ইন্ডিয়াতে। ‘ভেচুর কাউ’ নামের খুবই দুর্লভ প্রজাতির একটি গরু এটি। তবে ‘ডাকি’ কিংবা ‘মি. পিবলস’ এর মত এতোটাও ছোট নয় এই গরুটি। উচ্চতায় এটি প্রায় ৩১ ইঞ্চি। তবে গড়ে ৩১-৩৫ ইঞ্চি পর্যন্ত উচ্চতার হয়ে থাকে এই প্রজাতির গরুরা। মানে প্রায় আড়াই থেকে তিন ফুট উঁচু। নেহায়েত ছোট নয়, কি বলো?
গিরগিটি গিরগিটি
পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্র প্রজাতির গিরগিটিগুলো লম্বায় মাত্র ১৬ মিলিমিটার হয়। মানে মাত্র আধা ইঞ্চির একটু বেশি। তাহলেই বোঝো! এই গিরগিটি তো তুমি খালি চোখে ভালোমতো দেখতেই পারবে না! আর দেখতে পারলেও বোঝাই যাবে না যে এটা একটা গিরগিটি। এরা এতোই ক্ষুদ্র যে একটা এক টাকার কয়েনের উপর বসলে এদের পুরো শরীরটা সহজেই কয়েনটার উপর এঁটে যায়। ‘স্ফারোডাক্টিলাস এরিয়াজি’ নামক এই গিরগিটিদের একদম নাকের অগ্রভাগ থেকে লেজের শেষ পর্যন্ত পুরোটা মিলেই মাত্র আধা ইঞ্চি। তবে ‘স্ফারোডাক্টিলাস পারথেনোপিওন’ নামক আরেক প্রজাতির গিরগিটিকেও পৃথিবীর সবচাইতে ক্ষুদ্র গিরগিটি হিসেবে ধরা হয়। কেননা দু’টি প্রজাতির গিরগিটির আকৃতিই প্রায় সমান। এই ‘স্ফারোডাক্টিলাস পারথেনোপিওন’দেরকে প্রথম খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল ১৯৬৫ সালে ইংল্যান্ডের ভার্জিন দ্বীপে।

কী, খুব তো ছোট্ট ছোট্ট প্রাণীদের কথা শুনলে। কী ঠিক করলে, বলো? আমি তো ভাবছি এখন থেকে যখনই বনে জঙ্গলে বেড়াতে যাবো, তখনই এমনতরো প্রাণীদের খোঁজ করতে থাকবো। বলা তো যায় না, আমাদের দেশেও হয়তো এমন বামন প্রাণী থাকতে পারে। আর তা যদি আমরা খুঁজে বের করতে পারি, তাহলেই দেখো, গিনেজ বুকে আমাদের দেশের নামট চলে আসবে। আর যে বের করবে, প্রকৃতিবিজ্ঞানী হিসেবে তিনিও কিন্তু সবার সামনে চলে আসবেন। কী, নেবে নাকি চান্সটা?

Blogger templates

.
Recommended Post Slide Out For Blogger