পৃথিবীর বিষধর ১০ প্রাণী

|

Box Jellyfish

বক্স-জেলিফিস (Box Jellyfish):

King Cobra

শঙ্খচূড় সাপ (King Cobra):

সাপদের মধ্যে সবচে বড়ো হলো অজগর (Python)। কিন্তু বিষাক্ত সাপদের মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো- শঙ্খচূড়। আমাদের গোখরো সাপের (Cobra) সঙ্গে খানিক সাদৃশ্য আছে এদের। তাই এদের রাজ-গোখরো বা King Kobra বলা হয়। ধারণা করতে পারো কতো বড়ো হয়! এরা প্রায় ১৮-২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। মাটি থেকে প্রায় ৫ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়ে ফণা তুলে দাঁড়াতে পারে এরা। এদের বিষ-ধারণ মতাও সবচেয়ে বেশি। যে পরিমাণ বিষ এরা জমা রাখে তাতে মানুষ তো মারা যায়-ই, পূর্ণবয়ষ্ক একটি হাতিও নাকি অক্কা পায় মাত্র ৩ ঘন্টায়। তবে এরা সাধারণত মানুষের কাছাকাছি আসে না। ফণা তুলে শুধু ভয় দেখাতে চায়। ছোট ছোট নির্বিষ সাপই এদের খাদ্য। এদের সাধারণত দণি-পূর্ব এশিয়ার জঙ্গলেই দেখা যায়।
Marbled Cone Snails

মার্বেল-কোণ শামুক (Marbled Cone Snails):

কোণ শামুকরা কোণের মতো দেখতে, যেমন কোণ আইসক্রিম, সেরকমই। সব কোণ শামুকই বিষাক্ত, তবে এদের মধ্যেও সেরা হলো মার্বেল-কোণ শামুক। এদের খোলসটা দেখলে মনে হয়, মার্বেল পাথর দিয়ে মোজাইক (Mosaic) করা হয়েছে। তাই এদের এমন নাম। এদের পাওয়া যায় অস্ট্রেলিয়ার উষ্ণ লবণাক্ত সামুদ্রিক জলরাশিতে। এরা দেখতে কিন্তু খুবই সুন্দর। সুন্দর হলে কি হবে! বিষধর প্রাণীদের তালিকায় যে এদের স্থান ৩ নম্বরে।
Blue Ringed Octopus

নীল চক্রধারী অক্টোপাস (Blue Ringed Octopus):


 
 
Death Stalker Scorpion

মারণ কাঁকড়া বিছে (Death Stalker Scorpion):

আমাদের দেশে যে ধরনের কাঁকড়া বিছে পাওয়া যায়, ডেথ-স্টকারও দেখতে অনেকটা সেরকমই। তবে বিষধর হিসেব করলে! ওরে বাবা, এরা কিন্তু অনেক এগিয়ে। সাধারণত আমাদের দেশি কাঁকড়া বিছের কামড়ে কারও মৃত্যু হয় না। সামান্য কিছু জ্বালাপোড়া হয় মাত্র। কিন্তু এই মারণ কাঁকড়া বিছের নামেই বুঝতে পারছো, এদের বিষ কতোটা ভয়ঙ্কর হতে পারে। এদের বিষে অসহ্য ও তীব্র ব্যথা হয়, জ্বরও হয়। ফলে প্রাণী অচেতন হয়ে শেষে মারা যায়। এদের পাওয়া যায়, উত্তর আফ্রিকা আর মধ্য-প্রাচ্যের মরু এলাকায়।
Stone fish

পাথুরে মাছ (Stone fish):

দেখতে মোটামুটি চলনসই হলেও হতো। কিন্তু পাথুরে মাছকে নিয়ে বিশ্ব অসুন্দর প্রতিযোগিতার আয়োজনও করা যেতে পারে। সেই প্রতিযোগিতায় নিশ্চিতভাবে পাথুরে মাছই বিজয়ী হবে। তবে বিষের দিক দিয়ে কিন্তু এরা মোটেই ফেলনা নয়। মাছদের মধ্যে এরাই সবচে বিষধর। বিষের আক্রমণে প্রথমেই প্রাণী আকষ্মিক আঘাত পায়, এর পর প্যারালাইসিস (Paralysis) হয়ে প্রাণীদেহের কোষগুলোর মৃত্যু ঘটে। শেষে প্রাণীটি মারা যায়।

 
 
The Brazilian wandering spider

ব্রাজিলের যাযাবর মাকড়সা (The Brazilian wandering spider):

২০০৭ সালে ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’ এ জায়গা করে নিয়েছিলো এই মাকড়সা। কেন জানো ? এটি হলো পৃথিবীর সবচে বিষধর মাকড়সা। শুধু তাই নয়, মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী মাকড়সাদের মধ্যে এরাই সবচে এগিয়ে। তারচেয়েও ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে- এদের যাযাবর স্বভাব। যেকোন জায়গাতেই এরা লুকিয়ে থাকে। নির্দিষ্ট কোন বাসস্থান তৈরী না করে মানুষের আশেপাশেই ঘুরে বেড়ায়। তাই এদের দিয়ে মানুষ আক্রান্তও হয় বেশি। ভাগ্যিস, এরা বাংলাদেশে নেই।
Inland Taipan

ইনল্যান্ড তাইপ্যান (Inland Taipan):

পৃথিবীর সবচে বিষধর সাপ হচ্ছে- ইনল্যান্ড তাইপ্যান, পাওয়া যায় অস্ট্রেলিয়ায়। তাইপ্যানের বিষ সাধারণ গোখরো সাপের চেয়ে ২০০-৪০০ গুণ বেশি বিষাক্ত। এরা এতটাই বিষধর যে, এক কামড়ে যতোটুকু বিষ বের হয়, তাতে প্রায় ১০০ জন লোকের মৃত্যু হতে পারে। এই সাংঘাতিক বিষ যে কোন প্রাণীর স্নায়ুতন্ত্রে আঘাত হানে। এর ফলে মাত্র ৪৫ মিনিটেই একজন মানুষ মারা যেতে পারে। তবে স্বস্তির ব্যাপার হলো, এরা খুবই লাজুক, মানুষের সামনে আসেই না সাধারণত।

 
 
Golden poison frog

বিষধর সোনালী ব্যাঙ (Golden poison frog):

তোমরা যদি কখনও মধ্য বা দক্ষিণ আমেরিকার জঙ্গলে বেড়াতে যাও, অনেক সুন্দর প্রাণীর মাঝে কিছু সুন্দর ব্যাঙও দেখতে পাবে। দেখতে যতোই সুন্দর হোক না কেনো ওগুলো কিন্তু ভয়ানক বিষধর। সেখানকার জঙ্গলে পাওয়া যায় এমনই কিছু ব্যাঙ। যাদের আবার পয়জন ডার্ট ব্যাঙও (Poison dart frog) বলা হয়। কেনো জানো? আমেরিকার আদিবাসীরা এদের বিষকে শিকারের কাজে ব্যবহার করতো। গায়ে আগুনের আঁচ দিলেই এরা বিষ নিঃসরণ করে। আর সেই বিষ আদিবাসীরা তীরের ডগায় লাগিয়ে শিকার করতো। এদের গায়ে যথেষ্ট পরিমাণে বিষ থাকে। এতো বেশি পরিমাণ বিষ থাকে যে ২০,০০০ টি ইঁদুরের এর ফলে নিশ্চিত মৃত্যু হতে পারে। এদের বিষের মাত্র ২ মাইক্রোগ্রাম (এক গ্রামের ১০,০০,০০০ ভাগের মাত্র ২ ভাগ) একজন মানুষের মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট। দুই মাইক্রোগ্রাম কতটুকু হতে পারে ? একটা আলপিনের মাথার বিন্দুর সমান। ভাবা যায়!
Puffer Fish

পটকা মাছ (Puffer Fish):

পটকা মাছ হয়তো তোমরা অনেকেই চেনো। এরাও কিন্তু বিষাক্ত। এদের বিষক্রিয়ায় প্রায়ই মানুষ আক্রান্ত হয়। এই মাছ খেতে গিয়ে প্রায়ই বিষাক্রান্ত হয় মানুষ। মানুষ এই মাছ বিষাক্ত জেনেও খায়। জাপান এবং কোরিয়ার লোকেরা এদের খুব মজা করে খায়। কিভাবে? এদের সব অঙ্গ কিন্তু বিষাক্ত নয়। মস্তিষ্ক এবং চামড়ায় সবচে বেশি বিষ থাকে। জাপানে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রাধুঁনিই (Cheff) আছে, যারা জানে এই মাছের কোন কোন অংশ খাওয়া যায়। জাপানি’রা এই মাছ দিয়ে তৈরী স্যুপকে বলে “ফুগু (Fugu)” আর কোরিয়ান’রা বলে “বক-উহ (Bok-Uh)”। ঠিকমতো প্রক্রিয়াজাত করা না হলেই সেগুলো বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে।

এরা ছাড়াও অনেক ধরণের প্রাণী আছে যারা বিষধর। কিন্তু এরা হলো কিছু বিশেষ প্রাণী, যারা তাদের বিষের জন্য পরিচিত ভয়ঙ্কর প্রাণী হিসেবেই। তবে পৃথিবীতে যতো বিষাক্ত প্রাণী আছে তাদের সবার বিষের একমাত্র ব্যবহার হলো শত্রুদের হাত থেকে নিজেকে রা করা কিংবা খাদ্য সংগ্রহ করা। অকারণে মানুষকে বা অন্য কোন প্রাণীকে আক্রমণ করতে এরা কেউই চায় না।

Blogger templates

.
Recommended Post Slide Out For Blogger