পৃথিবীতে দ্রুততম যারা

|

চিতা বাঘ (Chitaah)

পৃথিবীর স্থলচর দ্রুত প্রাণীদের কথা বলতে গেলে প্রথমেই চলে আসবে চিতা বাঘের কথা। এ আর নতুন কি! কারণ বিড়াল প্রজাতির এই প্রাণীটি অসম্ভব দ্রুত দৌড়াতে পারে। কল্পনা করো তো একটা প্রাণী ঘন্টায় ৭০ মাইল বেগে দৌড়ে যাচ্ছে! এত জোরে গাড়ি চালালে তো সেটা অ্যাক্সিডেন্ট করবে নিশ্চিত। তবে চিতা বাঘ কিন্তু অ্যাক্সিডেন্ট করে না। মজার ব্যাপার  তাই না! আর একটা মজার কথা শোনো। গাড়ি চালানোর সঙ্গে সঙ্গে কি তার স্পিড ওঠে? ওঠে না! কিন্তু চিতা বাঘ দৌড়ানো শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই তার গতি শুন্য থেকে একলাফে ৭০ মাইলে উঠে যায়। আর এই বেগ তুলতে তার সময় লাগে মাত্র ৩ সেকেন্ড।


প্রোঙ্গহর্ন অ্যান্টিলোপ (Pronghorn Antilope)

উত্তর আমেরিকায় এক ধরণের হরিণ দেখা যায়। এদের বলা হয় প্রোঙ্গহর্ন অ্যান্টিলোপ। পৃথিবীতে দ্রুততম প্রাণীদের তালিকায় রয়েছে এই প্রাণীটির নাম। চিতা বাঘের সমান দৌড়তে না পারলেও নেহায়েৎই খারাপ নয় এদের গতিবেগ। ঘণ্টায় ৬১ মাইল বেগে দৌড়ানোর ক্ষমতা রাখে এই প্রজাতির হরিণগুলো। তবে একদিক থেকে এই হরিণেরা চিতা বাঘের থেকে এগিয়েই আছে। বড় হার্ট এবং ফুসফুসের কারণে তাদের দম থাকে বেশি। এ কারণেই চিতাবাঘের থেকে বেশি সময় এরা তাদের এই বেগ ধরে রাখতে পারে। এই হরিণগুলো লাফ দেবার ব্যাপারে বড়ই নাজুক। ঠিক মতো লাফ দিতে পারে না এরা।

ওয়াইল্ড বিস্ট (Wildebeest)

আফ্রিকাতে এই প্রাণীগুলোকে দেখতে পাওয়া যায়। বলতে পারো এ আবার কি প্রাণী! তবে শোনো, এগুলো আসলে হলো বন্য গরু। প্রচন্ড জোরে ছুটতে পারে। তাই তো দ্রুততমদের তালিকায়  এদের স্থান তিন নম্বরে। এদের এই ছুটতে পারার ক্ষমতাই কিন্তুবিভিন্ন প্রাণীর হাত থেকে এদেরকে রক্ষা করে। কারণ বাঘ এবং সিংহ আবার ওয়াইল্ড বিস্ট খেতে দারুণ পছন্দ করে। নিজেদের বাঁচাতে ওয়াইল্ড বিস্টও ছুটতে থাকে প্রাণপণে। এদের গতি ঘণ্টায় ৫০ মাইল।


সিংহ (Lion)

এবারে আসি পশুরাজ সিংহের কথায়। দেখতে এবং চলন বলনে রাশভারী সিংহ মামা খুব বেশি কষ্ট করতে রাজী নয়। কাজেই তার ছোটার পরিমাণ খুবই কম। তবে একবার দৌড়ালে তার গতিও আবার দারুণ বেশি। ঘন্টায় ৫০ মাইল। তবে সিংহ সাধারণত কৌশল খাটিয়েই শিকার ধরে থাকে। এজন্য তাকে ছুটতে দেখা যায় খুবই কম। এদিকে সিংহীরা আবার ছুটে ছুটেই শিকার ধরে থাকে। এক একটা সিংহের ওজন কতো হতে পারে বলো তো! প্রায় ৫৫০ পাউন্ড। এত্তো ভারী এই শরীর নিয়ে তারা যে দৌড়াতে চাইবে না এটাইতো স্বাভাবিক।

থম্পসনের ‘গজলা’ হরিণ (Thomson's Gazelle)

এই হরিণগুলো আকারে ছোট। তবে ছুটতে পারে অনেক বেশি। যদি জিজ্ঞেস করো এর নাম এরকম হবার কারণ কি, তাহলে তো শুনতে হবে একজনের গল্প। জোসেফ থম্পসন নামে একজন স্কটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ ছিলেন। তিনি শুধু প্রত্নতত্ত্ববিদই ছিলেন না, সেই সঙ্গে একজন বিখ্যাত অভিযাত্রীও ছিলেন। তিনিই প্রথম এই হরিণ প্রজাতির সন্ধান পেয়েছিলেন। কাজেই তার নামানুসারে এইরকম নামকরণ করা হয়েছে। থম্পসন গ্যাজেলদের প্রধান শত্রু হলো চিতা বাঘ। চিতার তুলনায় এরা কম ছুটতে পারলেও অনেক বেশি সময় এরা তাদের গতি ধরে রাখতে পারে। যা চিতা পারে না। এজন্য তারা চিতার কাছ থেকে বেঁচে যায়। এদের গতিবেগ ঘন্টায় ৫০ মাইল।


কোয়ার্টার হর্স (Quarter horse)

আমেরিকাতে এই ধরণের ঘোড়া দারুণ জনপ্রিয়। কেনো বলো তো? কারণ এরা যে খুব ভালো ছুটতে পারে। আর ঘোড়দৌড়ের মাঠে তো এই ঘোড়াগুলোই জেতে। দারুণ জোরে ছুটতে পারা এই ঘোড়াগুলো যে সবার খুব প্রিয় হবে এটাই তো স্বাভাবিক। এদের সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘন্টায় প্রায় ৪৮ মাইল। এর সঙ্গে ছুটে অন্যান্য ঘোড়ারা নাগালই পায় না।

এল্ক (Elk)

এল্ক হলো এক ধরণের বড়ো হরিণ। এদেরকে দেখা যায় উত্তর আমেরিকা এবং পূর্ব এশিয়াতে। পৃথিবীতে সবচে জোরে ছুটতে পারা স্থলচর প্রাণীদের মধ্যে এর অবস্থান সাত নম্বরে। এই প্রাণীগুলোও জোরে ছুটে তাদের শত্রুদের এড়িয়ে থাকে। এল্কদের ঘন্টায় গতিবেগ হলো ৪৫ মাইল।


কেপ’এর শিকারী কুকুর (Cape Hunting Dog)

এই কুকুরদেরকে আফ্রিকার বন্য কুকুরও বলা হয়। এই শিকারী কুকুরগুলোকে আফ্রিকাতে দেখা যায়। এরা সাধারণত তাদের ধূর্ত স্বভাব এবং দ্রুত গতিকে কাজে লাগিয়ে শিকার ধরে থাকে। তবে শিকারী কুকুরদের শিকার করার ব্যাপারটাই আলাদা। তারা দল বেঁধে শিকার করে থাকে। সাধারণত তারা মাঝারী আকারের শিকারকে টার্গেট করে তারপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এভাবে এই কুকুরেরা ওয়াইল্ড বিস্ট কিংবা জেব্রাদেরকেও মেরে ফেলে। এদের ঘন্টায় গতিবেগ ৪৫ মাইল।
 
আমেরিকান নেকড়ে (Coyote)

এই ধরণের নেকড়েগুলোকে পশ্চিম ও উত্তর আমেরিকাতে দেখা যায়। ঘন্টায় ৪৩ মাইল বেগে ছুটতে পারা এই নেকড়ে দ্রুততার দিক ৯ম স্থানে রয়েছে। তবে এরা সাধারণত ছোট ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী শিকার করে থাকে। যেমন, খরগোশ, কাঠবেড়ালী, হরিণ। সুযোগ পেলে অবশ্য গৃহপালিত প্রাণীগুলোকেও ছাড়ে না। কয়োট নেকড়েদের রুচি দারুণ ভালো। সেজন্য তারা যে মৌসুমে যা পাওয়া যায়, তাই দিয়েই ক্ষিদে মিটিয়ে থাকে।
 
 
 
 
ধূসর শেয়াল (Gray Fox)

ধূসর শেয়ালদেরকে উত্তর আমেরিকাতে দেখতে পাওয়া যায়। এরা সাধারণত একা একা শিকার করে থাকে। দ্রুততার দিক থেকে ১০ম স্থানের এই প্রাণীদের প্রিয় শিকার হচ্ছে খরগোশ, বিভিন্ন ইঁদুর, পাখি ইত্যাদি। আর তাদের গতি কতো? তাদের গতি হলো ঘন্টায় ৪২ মাইল। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে- এই শেয়ালেরা তাদের খাবার হিসেবে যেমন মাংস খায় তেমনি বিভিন্ন ফল আর শাকসব্জিও খেয়ে থাকে।

Blogger templates

.
Recommended Post Slide Out For Blogger