কিম্ভুতকিমাকার প্রাণীদের গল্প

|
কথায় বলে, সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র। কিন্তু সত্যিই তাই? তাহলে অসুন্দররা কী সবসময় ব্যর্থ হয়? কিম্বা তাদের স্বভাব চরিত্র কী খুব খারাপ হয়? সে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে, কয়েকটি প্রাণীর কথা জেনে নাও। এসব প্রাণীদের একটা বিশেষত্ব আছে। সেটা হচ্ছে, এরা দেখতে মোটেও ভালো নয়। উল্টো বিদঘুটে। কিম্ভুতকিমাকার শব্দটি এইসব প্রাণীদের সাথে চমৎকার ভাবে মানিয়ে যায়। এদের দেখলে তোমাদের কেউ কেউ ঘেন্নায় মুখ ফিরিয়ে নেবে, কেউ কেউ ভয়ে শিউরে উঠবে। কিন্তু প্রাণীগুলো দেখতে খারাপ বলে সবার স্বভাব চরিত্র যে খারাপ তা কিন্তু মোটেও সত্যি নয়। এদের কারো কারো স্বভাব একটু আধটু খারাপ হলেও অনেকেই আছে যারা একেবারেই নিরীহ টাইপের প্রাণী। শুধু তাই নয়, এরা অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের উপকার করে।

প্যাঙ্গোলিন

64Pangolinপ্যাঙ্গোলিনের অদ্ভূত আকার আকৃতি দেখে একে অনেকই ভাবে ডাইনেসরের বংশধর বা গিরগিটির ভাইবন্ধু, কিন্তু প্যাঙ্গোলিন এর কোনটাই নয়। তবে লোকে কেন তাকে এসব ভাবে? কারণ আর কিছু নয় কারণ হচ্ছে তাদের চেহারাসুরত। দেখতে ভয়ঙ্কর রকমের প্রাণী এই প্যাঙ্গোলিন, সারা শরীর লালচে বা খয়েরি রঙা শক্ত আঁশ দিয়ে ঢাকা। একেবারে আঁশ দিয়ে মাছের শরীর যেমন ঢাকা থাকে অনেকটা তেমন। ছুচাঁলো মুখ শরীরের চেয়ে বড় ইয়া মোটা লেজ। আর মুখের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে থাকা আধালো একটা জিভ। কি বর্ণনা শুনেই শরীর রি রি করে উঠছে ? ওঠারই কথা। তবে সবচে অবাক করার মত ব্যাপার হচ্ছে এত ভয়ঙ্কর দর্শন এ প্রাণীটা কিন্তু চরিত্রগতভাবে নীরিহ ও গোবেচারা টাইপের। তার কাজ কাউকে ভয় দেখানো নয়, তার কাজ আপন মনে পিঁপড়ে ধরে খাওয়া। পিঁপড়েভুক এ প্রাণী যখনই ভয় পায় তখনই নিজের বিশাল শরীরটাকে গুটিয়ে একটা ছোট বলের মতো এবং ভীষণ শক্ত করে ফেলে। এতোটাই শক্ত যে তখন তার গাড়ে আঘাত করা প্রায় কঠিন হয়ে যায়।

বাদুড়

64BatVampire বাদুরের চেহারাটা বিদঘুটে বলেই গল্প-উপন্যাসে ভ্যাম্পায়ার বা রক্তচোষা হিসেব দেখানো হয়েছে। ভ্যাম্পায়ার বাদুর পৃথিবীতে থাকলেও এরা কখনোই মানুষের রক্ত পান করে না। পান করে গবাদি পশুর রক্ত। এমনিতে এরা খুব নিরীহ গোছের প্রাণী, কিন্তু বিকট চেহারা আর রাতের বেলায় রহস্যময় চলাফেরা একে ভৌতিক প্রাণী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বাদুড় দেখতে ভীষণ বিকট হলেও কিন্তু এরা খুব উপকারি। বাদুড়ের রক্ত দিয়ে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করার ঔষধ আবিস্কারের চেষ্টা চলছে। তারপর এরা পোকামাকড় খেয়ে দেয়ে পরিবেশ পরিস্কার রাখে। একটি বাদুড় ঘন্টায় ছয়শো মশা সাবাড় করতে পারে। এছাড়াও বাদুড় ফুলের পরাগায়নেও সহায়তা করে।

ট্যারানুটলা

64Tarantula পৃথিবীর সকল লোককে যদি তাদের দেখা সবচে বিদুঘুটে প্রাণীর নাম বলতে বলা হয় তারা অধিকাংশই যে জবাবটা দেবেন সেটা হচ্ছে মাকড়শা। মাকড়শা মানুষের কাছের একটি কিম্ভুতকিমাকার প্রাণী। নিজের ছোট একটা শরীরে আট-আটটা পা এবং সেই পায়ের মাথায় আবার আটটা করে চোখ দিয়ে যে প্রাণী তরতর করে হেঁটে বেড়ায় কিংবা হঠাৎ করে পেটের ভেতর থেকে সুতো বের করে তা বেয়ে নেমে আসে তাকে আর যাই হোক সুন্দর প্রাণী বলা যাবে না। এই বিদঘুটে প্রাণীর মধ্যে আবার সবচে কিম্ভুতদর্শন মানে বিদঘুটে জাতটির নাম হচ্ছে ট্যারানুটলা। একটা বড় আকারের পালার সমান শরীর ঘিরে লোমশ আটটা পা নিয়ে এই প্রাণী যখন ছুটে বেড়ায় তখন শিউরে না উঠে উপায় থাকে না।
ট্যারানটুলা দেখতে যেমনই হোক পারতপক্ষে কিন্তু এটি বেশ উপকারী। ট্যারানটুলা বিষাক্ত মাকড়সা। তবে এর বিষ মানুষের তেমন ক্ষতি না করতে পারলেও উপকারই করে। মানে এর বিষ দিয়ে শিকারিরা শিকারকে বশ করতে এবং হজম শক্তি বাড়ানোর ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করে। শুধু তাই না পোকামাকড় খেয়ে এরা ঘরদোর পরিস্কার রাখে। তাই দক্ষিণ আফ্রিকায় বহু বাড়িতে ট্যারানটুলা মাকড়শা পোষা হয়।

জোঁক

যেসব প্রাণী দেখলে অনেকের গা ঘিন ঘিন করে ওঠে সেসব প্রাণীর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জোঁক। কেঁচোর দূর সম্পর্কের আত্মীয় জোঁক। কিন্তু জোঁক রক্ত খায়। কিন্তু এদের কামড়ে ব্যাথা লাগে না। আগা-মাথাহীন চক্ষুছাড়া একটা লালচে মাংসখন্ড হচ্ছে জোঁক। জোঁক পানিতেই মূলত বাস করে। কিন্তু কিছু কিছু জোঁক আছে যারা বনে-জঙ্গলে মাটিতে লাফিয়ে লাফিয়ে চলাফেরা করে। জোঁকের লালা থেকে পেইনকিলার তৈরি করে রোগীকে সংজ্ঞাহীন করার জন্য ডাক্তাররা ব্যবহার করেন।

কোমাডো ড্রাগন

64KomodoDragon কোমাডো ড্রাগন হচ্ছে গিরগিটি প্রজাতির প্রাণী। সবচে বড় আকারের গিরগিটিকেই কোমাডো ড্রাগন বলা হয়। নাক থেকে লেজ পর্যন্ত দৈর্ঘ্য দশ ফুট পর্যন্ত হয়। এদের গড় আয়ু হয় প্রায় পঞ্চাশ বছর। কুঁচকে থাকা শেওলা পড়া মোটা চামড়ায় ঢাকা টিকটিকির মতো তার বিশাল বড় শরীরের বিকট গড়ন দেখলে আতঁকে উঠবে যে কেউ। ঘাস ফড়িং থেকে শুরু করে ছাগল পর্যন্ত কোন কিছুতেই অরুচি নেই এদের। দেখতে ভয়ানক হলেও এরা খুব নিরীহ স্বভাবের। মানুষের গন্ধ পেলেই ছুটে পালায়। কিন্তু তবু এদের দেখে মানুষ নিজ দায়িত্বে নিজেরাই ভয় পেয়ে এদের পিটিয়ে মেরে ফেলে। আর এর কারণে বর্তমান সময়ে কোমাডো ড্রাগনের সংখ্যা কমে গেছে অস্বাভাবিকভাবে। ইন্দোনেশিয়ার ছ’টি ক্ষুদ্র দ্বীপ ছাড়া এখন আর কোথাও এদের দেখা যায় না।

পিরানহা

64Piranha2 গল্প, উপন্যাস ও চলচ্চিত্রে পিরানহাকে উপস্থাপন করা হয় আমাজনের সবচে বিপদজনক এবং আতঙ্কজনক প্রাণী হিসেবে। পিরানহার দেহের গড়ন প্রায় মাঝারি আকারের রূপচাঁদার মতোই। শুধু দু'চোয়ালভরা ক্ষুরধার দাঁতের সারির কারণে নিচের চোয়াল একটু এগিয়ে থাকায় এদের বিশাল ভীতিকর বলে মনে হয়। কিন্তু এরা ব্যাঙের চেয়ে বড় কোন প্রাণীর ওপর সাধারণত হামলা চালায় না। অনেক দেশের মানুষের কাছে পিরানহা সুস্বাদু মাছ হিসেবে পরিচিত।

Blogger templates

.
Recommended Post Slide Out For Blogger