2) হ্যাকারদের ভয়াবহ হামলার মুখে বিশ্ব

|
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধরনের ও ভয়াবহ ধারাবাহিক সাইবার আক্রমণের শিকার। নিরাপত্তা সংস্থা ম্যাকাফির নতুন অনুসন্ধানের রিপোর্টে এ কথা বলা হয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় ও ধারাবাহিক সাইবার হামলা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। হ্যাকাররা ৭২টি সরকারি ও বেসরকারি 


সংস্থার নেটওয়ার্কে গোপনে অনুপ্রবেশ করে ও সেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন তথ্য হাতিয়ে নেয়। এর মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘও। তাছাড়া রয়েছে বিশ্বের নামী-দামি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে বলা হয়েছে, সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা ম্যাকাফি হ্যাকারদের এ গোপন অনুপ্রবেশের ঘটনা জানতে পারে। সংস্থাটির কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, তারা বিশ্বাস করেন, ধারাবাহিক এ হ্যাকিংয়ের ঘটনার অন্তরালে একটি রাষ্ট্রের হ্যাকাররা সক্রিয়। তবে, সাইবার হামলা চালানোর পেছনে কোন দেশের ভূমিকা রয়েছে। তা তারা জানায়নি। অবশ্য, একজন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ চীনের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। তিনি বলেন, প্রাপ্ত তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত সে দিকেই নির্দেশ করে। ৫ বছরে ধারাবাহিক হ্যাকিং অভিযানের শিকার দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, তাইওয়ান, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও কানাডা। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে রয়েছে, দ্য এসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশন্স (এএসইএএন); দ্য ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি (আইওসি); দ্য ওয়ার্ল্ড এন্টিডোপিং এজেন্সি; ও ছোট-বড় বহু কোম্পানি। ম্যাকাফি জানিয়েছে, জাতিসংঘ ২০০৮ সালে এ রকম একটি হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছিল। সেবার জেনেভার ইউএন সেক্রেটারিয়েটের সুরক্ষিত কম্পিউটার সিস্টেমে সাইবার হামলা চালিয়েছিল হ্যাকাররা। ২ বছর হ্যাকাররা লুকিয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করার পর নীরবে বহু গুরুত্বপূর্ণ ও গোপনীয় তথ্য সরিয়ে ফেলেছিল। গতকাল প্রকাশিত ১৪ পৃষ্ঠার এক রিপোর্টে ম্যাকাফির হুমকি অনুসন্ধানকারী সংস্থার ভাইস-প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি অ্যালপেরোভিচ লিখেছেন, এতোগুলো প্রতিষ্ঠানকে সাইবার হামলার শিকার হতে দেখে আমরাও বিস্মিত। অপরাধী এসব হ্যাকারের ঔদ্ধত্য ও সাহস দেখে আমরা হতবাক। ওই রিপোর্টে তিনি লিখেছেন, চুরি হয়ে যাওয়া এ তথ্য-উপাত্তগুলোকে কিভাবে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে- সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। এতে বলা হয়েছে, যদি এর একটি সামান্য অংশও অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার লক্ষ্যে ব্যবহৃত হয়, তবে তার জন্য বিশাল হুমকির মুখে পড়তে হবে। অপরাধীরা যদি চুরি করার তথ্যগুলোকে আরও উন্নত পণ্যসামগ্রী প্রস্তুতের উদ্দেশে বা কোন ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করতে ব্যবহার করে, তবে তাতে একটি বিরাট ও অপূরণীয় অংকের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। এদিকে এ বছরের মার্চে ম্যাকাফি হ্যাকিং অভিযানের পরিধি ও বিস্তার সম্পর্কে জানতে পেরেছে। নিরাপত্তা ভেঙে হ্যাকিংয়ের ঘটনা ২০০৬ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ধীরে ধীরে এতোটা ব্যাপক আকার ধারণ করতে শুরু করে। তবে এখনও হ্যাকিংয়ের আরও অনেক ঘটনা অজানা রয়ে গেছে। এদিকে ম্যাকাফি বলেছে, হ্যাকাররা রিমোট অ্যাকসেস টুল্‌ (আরএটি) বা দূরবর্তী কম্পিউটারের নেটওয়ার্কে ঢুকে পড়ার বিশেষ একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করছে, যা নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরাও ব্যবহার করে থাকেন। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, কিছু কিছু সাবাইবার হামলা শুধু এক মাস স্থায়ী ছিল। তবে, সবচেয়ে দীর্ঘ সময় যে সাইবার আক্রমণটি হয়েছিল, সেটির স্থায়িত্ব ছিল ২৮ মাস। এ হামলাটি হয়েছিল অলিম্পিক কমিটি অব অ্যানআনআইডেন্টিফাইড এশিয়ান নেশন সংস্থাটির উপর। এ প্রসঙ্গ দিমিত্রি অ্যালপেরোভিচ বলেছেন, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও সরকারি সংস্থাগুলো প্রতিদিন ছিনতাই ও লুণ্ঠনের শিকার হচ্ছে। তিনি বলেন, তারা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হারাচ্ছে। অসাধু ও অসৎ প্রতিদ্বন্দ্বীদের হাতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চলে যাচ্ছে। অ্যালপেরোভিচ আরও বলেন, বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি চুরি হওয়ার ক্ষেত্রে এটাই ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘটনা। তিনি বলেছেন, যে পর্যায়ে এ ধরনের হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটছে, তা সত্যিকার অর্থেই অত্যন্ত ভয়াবহ।

Blogger templates

.
Recommended Post Slide Out For Blogger