ম্যাকের যে ১০টি ফিচার নকল করেছে উইন্ডোজ

|
অ্যাপলের সিইও স্টিভ জবস শুরু থেকেই দাবি করে আসছেন, বিল গেটসের অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে শীর্ষে থাকলেও এর সিংহভাগই অ্যাপলের ম্যাকিনটশ অপারেটিং সিস্টেম থেকে চুরি করা বা নকল করা। কথার সত্যতা হয়তো অনেকেই জানেন, আবার অনেকেই জানেন না।
2010-11-24_120056

সত্য এই যে, গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেসের ধারণা সর্বপ্রথম কম্পিউটারের জগতে আবিষ্কার ও সফল বাস্তবায়ন করে স্টিভ জবসের অ্যাপল তথা ম্যাকিনটশ বা সংক্ষেপে ম্যাক। সেই থেকে এ পর্যন্ত ম্যাক থেকে প্রচুর সুবিধা বা ফিচার নকল করে আসছে মাইক্রোসফট। বিশেষ করে উইন্ডোজ ভিসতায় প্রচুর বিষয় রয়েছে যেগুলো ম্যাক ওএস এক্স থেকে নকল করা। আসুন এমন ১০টি উইন্ডোজের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানা যাক যেগুলোর আবিষ্কারক মূলত অ্যাপল।

টাস্কবার : ডক

41SS-microsoft-steal-apple-01

উইন্ডোজ সেভেনের টাস্কবারের আইডিয়া মূলত অ্যাপলের ম্যাকিনটশ অপারেটিং সিস্টেমের ডক থেকেই নেয়া। ডকের সুবিধাগুলোই উইন্ডোজ সেভেনের টাস্কবারে যোগ করেছে মাইক্রোসফট। ডকের মতোই আপনি উইন্ডোজ সেভেনের টাস্কবার থেকে অ্যাপ্লিকেশন চালু করতে পারবেন, মিনিমাইজ করতে পারবেন, আবার অ্যাপ্লিকেশন আইকনগুলো ড্র্যাগ করে স্থান পরিবর্তন বা নতুন অ্যাপ্লিকেশন যোগ করতে পারবেন। উইন্ডোজ সেভেনে চালু থাকা অ্যাপ্লিকেশনের আইকনে একটি বক্সের ইফেক্ট থাকে, আর ম্যাকে একটি ডট থাকে। তবে ডকের মতো করেই তৈরি করায় বলা যায় টাস্কবার ডকের আইডিয়া থেকেই তৈরি। আর ডক যে ম্যাকের সম্পত্তি তা তো সবাই জানে!

জাম্প লিস্ট : ডক মেনু

41SS-microsoft-steal-apple-02
টাস্কবারে অ্যাপ্লিকেশন আইকন বা লঞ্চার যোগ করা ছাড়াও উইন্ডোজ সেভেনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে টাস্কবারে নির্দিষ্ট অ্যাপ্লিকেশন আইকন বা লঞ্চারের উপর রাইট ক্লিক করে ঐ অ্যাপ্লিকেশনে সাম্প্রতিক চালু করা ফাইল বা পিন করা ফাইল দেখা যায়। এটি ম্যাকে লেপার্ডেরও আগের সংস্করণ থেকে রয়েছে। তবে কিছু কিছু বিষয়ে ম্যাকে সুবিধা বেশি আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে উইন্ডোজের সুবিধা বেশি। তবে সবমিলিয়ে অ্যাপ্লিকেশন লঞ্চারে রাইট ক্লিক করে মেনু ওপেন করার আইডিয়া ম্যাকের ডক থেকেই নেয় মাইক্রোসফট।

অ্যারো পিক : এক্সপোজে

41SS-microsoft-steal-apple-03
উইন্ডোজ সেভেনের অ্যারো পিক সুবিধাটির মাধ্যমে আপনি নিমিষেই চালু থাকা সব প্রোগ্রাম অদৃশ্য করে দিয়ে ডেস্কটপ দেখে নিতে পারেন। মজার ব্যাপার হলো, এই সুবিধাটি এক্সপোজে নামে ২০০৩ সালে সর্বপ্রথম দেখা যায় ম্যাক ওএস এক্স ১০.৩ প্যানথার-এ। অবশ্যই এই দু’টির মধ্যেও কিছু কিছু ব্যতিক্রম বিষয় আছে। তবে মূল আইডিয়াটি সর্বপ্রথম আনে ম্যাক যা অ্যারো পিক নামে উইন্ডোজ নকল করে। উল্লেখযোগ্য পার্থক্য হচ্ছে, উইন্ডোজ সেভেনে সবগুলো উইন্ডো ট্রান্সপারেন্ট বা স্বচ্ছ হয়ে যায় আর ম্যাকে উইন্ডোগুলো স্লাইড হয়ে সরে যায়।

ফাইল প্রিভিউ

41SS-microsoft-steal-apple-04
উইন্ডোজ ভিসতা এবং সেভেনে ফাইল ওপেন না করেই প্রিভিউ দেখা যায়। অথচ ইতিহাস বলছে, ম্যাকে এই ফাইল না খুলেই প্রিভিউ দেখার সুবিধা রেখেছে ওএস এক্স ১০.০ চিতা সংস্করণ থেকেই। বরং আরো এগিয়ে আছে ম্যাক। উইন্ডোজে কোনো টেক্সট ফাইল না খুলে প্রিভিউ দেখা যায় না। কিন্তু ম্যাকে ওএস এক্স ১০.৫ লেপার্ড থেকে কুইক লুক নামের সুবিধায় টেক্সট ফাইলও ওপেন না করে পড়া যায়।

ডেস্কটপ গ্যাজেটস : উইজেটস

41SS-microsoft-steal-apple-05
উইন্ডোজ ভিসতা এবং সেভেনে ডেস্কটপ গ্যাজেটস নামে নতুন একটি সুবিধা যোগ হয়েছে যেগুলো ডেস্কটপে ছোট ছোট অ্যাপ্লিকেশনের মতো কাজ করে থাকে। এগুলো ঘড়ি, ছবি, সিপিইউ ইনফরমেশন, আবহাওয়া বার্তা এমনকি ইন্টারনেট থেকে তথ্য এনে (আরএসএস ফিড) প্রদর্শন করারও বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হয়ে থাকে। কিন্তু ম্যাকে এগুলো অনেক আগে থেকেই ছিল উইজেট নামে। ম্যাক ওএস এক্স ১০.৪ টাইগার থেকেই ম্যাক ব্যবহারকারীরা ঘড়ি, ক্যালেন্ডার, স্টক মার্কেটের ফিড ইত্যাদি ডেস্কটপ উইজেট উপভোগ করে আসছেন। উল্লেখ্য, ম্যাকে উইন্ডোজের তুলনায় অনেক বেশি সুবিধা থাকে। তবে দু’টো প্লাটফর্মেই ইন্টারনেট থেকে বাড়তি আরো গ্যাজেট বা উইজেট ডাউনলোড করে নেয়া যায়।

স্টিকি নোটস : স্টিকি

41SS-microsoft-steal-apple-06
উইন্ডোজ সেভেনের সঙ্গে ডিফল্ট অবস্থায় এই প্রথম স্টিকি নোটস সুবিধাটি আনা হয় যাতে ডেস্কটপের উপর ছোট ছোট নোট রাখা যায়। কিন্তু ম্যাকে ১৯৯৪ সাল থেকেই স্টিকিস নামের এই সুবিধা দিয়ে আসছে এবং এতে লেখার বানান পরীক্ষা এমনকি টেক্সট ফরম্যাটিংও করা যায়। অর্থাৎ, স্টিকি নোটসও অ্যাপল থেকেই মেরে দিলো উইন্ডোজ।

সেইভড সার্চ : স্মার্ট ফোল্ডার

41SS-microsoft-steal-apple-07
২০০৫ সালে বাজারে আসা ম্যাক ওএস এক্স ১০.৪ টাইগারে স্মার্ট ফোল্ডার অপশনটি প্রথম দেখা যায়। এটি মূলত একটি ভার্চুয়াল ফোল্ডার যেখানে সার্চের ফলাফল থাকে। মাইক্রোসফট এই আইডিয়াও ম্যাকের নকল করে উইন্ডোজ ভিসতায় যোগ করে দেয় মাইক্রোসফট। ম্যাক ও উইন্ডোজের বর্তমান সংস্করণগুলোর দু’টোতেই এই সুবিধা রয়েছে এবং দু’টোর কাজই পুরোপুরি এক।

স্বয়ংক্রিয় নেটওয়ার্ক শেয়ার

41SS-microsoft-steal-apple-08
ম্যাক ওএস এক্স ১০.৫ থেকে অ্যাপল নতুন একটি বৈশিষ্ট্য যোগ করে ম্যাক-এ। নেটওয়ার্ক ফাইল শেয়ারগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবেই খুঁজে বের করে ম্যাক এবং তা সাইডবারে দেখায়। মাইক্রোসফটের এই ফিচারটি এতোটাই পছন্দ হয়ে যায় যে উইন্ডোজ ভিসতায় তারাও এই সুবিধা যোগ করে এবং তাদের আবিষ্কৃত পুরনো নেটওয়ার্ক সিস্টেমটি বাদ দিয়ে দেয়।

আরএসএস ফিড

41SS-microsoft-steal-apple-09
উইন্ডোজ ভিসতা থেকে শুরু করে মাইক্রোসফট তাদের ওয়েব ব্রাউজার ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ৭-এ আরএসএস রেডার যোগ করে। এতে করে বিভিন্ন সাইটের আপডেট ব্রাউজারে বসেই পাওয়া সম্ভব। কিন্তু ব্রাউজারে ইন্টিগ্রেটেড আরএসএস রেডারও মাইক্রোসফটের আইডিয়া নয়। ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ৭ বাজারে আসার অনেক আগে থেকেই ম্যাক ওএস এক্স টাইগারে সাফারি ২ ব্রাউজারে ইন্টিগ্রেটেড আরএসএস রেডার দিয়ে দেয়া হয়। এছাড়াও অ্যাপল মেইল সফটওয়্যারও আরএসএস রেডার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। অর্থাৎ, কেবল উইন্ডোজেই নয়, বরং তাদের ব্রাউজারের আইডিয়াও অ্যাপল থেকে নিয়েছে মাইক্রোসফট।

ডিস্ক ইমেজ বার্নার : ডিস্ক ইউটিলিটি

41SS-microsoft-steal-apple-10
উইন্ডোজ সেভেনের আগে যে কোনো সিডি/ডিভিডি রাইটের কাজে আপনাকে থার্ড পার্টি ইমেজ বার্নার সফটওয়্যার যেমন নিরো ব্যবহার করতে হতো। উইন্ডোজ সেভেনের বহুল প্রশংসিত সুবিধাগুলোর মধ্যে বিল্ট-ইন ইমেজ বার্নার সুবিধাটি অন্যতম। কিন্তু এই আইডিয়ার জনকও মাইক্রোসফট নয়। ম্যাক ওএস এক্স এরও আগের সংস্করণগুলোতেই সিডি/ডিভিডি রাইট অথবা ডিস্ক ইমেজ তৈরি করার সুবিধা দেয়া ছিল। হায়রে মাইক্রোসফট!

শেষ কথা

সুতরাং, দেখতেই পাচ্ছেন অ্যাপলের তথা স্টিভ জবসের মাথা থেকে বের হওয়া আইডিয়া অবলীলায় ব্যবহার করে আসছে মাইক্রোসফট সেই কম্পিউটারের প্রথম দিক থেকেই। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, কেবল মাইক্রোসফটই যে অ্যাপলের ম্যাকিনটশ অপারেটিং সিস্টেম থেকে আইডিয়া চুরি করেছে, এমনটা ভাবা ভুল। এমন অনেক বৈশিষ্ট্য বা ফিচারই আছে যেগুলোর আবিষ্কারক মাইক্রোসফট এবং পরবর্তীতে অ্যাপলের অপারেটিং সিস্টেমেও সেসব বৈশিষ্ট্য দেখা গেছে। অর্থাৎ, অ্যাপলও মাইক্রোসফটের আইডিয়া চুরি করে নিজেদের অপারেটিং সিস্টেমে যোগ করেছে। ‍আগামী পর্বে জানতে পারবেন তেমনই ১০টি ফিচারের কথা যেগুলোর নির্মাতা বা আবিষ্কারক মাইক্রোসফট এবং পরবর্তীতে নকল করে অ্যাপলও তাদের ম্যাকিনটশে যোগ করেছে। সেই পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকুন।

Blogger templates

.
Recommended Post Slide Out For Blogger