মহাবিশ্বে জেগে ওঠা

|

সবাইকে আমার বিশাল ধন্যবাদ জানানোর আছে। বিবিসিতে বিডিআর ম্যুটিনির সংবাদ দেখে আমি ইন্টারনেটে বসার শক্তি হারিয়ে ফেলি, কেননা আমি জানতাম এদের মধ্যে কয়েকজনকে আমি চিনব। ব্যক্তিগতভাবে মৃত্যু নিয়ে আমি অভিযোগ করার কিছু পাইনা, মৃত্যু সাম্যবাদী এবং টু স্টুপিড টু ডিসক্রিমিনেইট। আমার অভিযোগ ছিল জীবন নিয়ে। আমার ভাবতে সঙ্কোচ হচ্ছিল সেই মৃতদের জীবিত কাছের মানুষদের কথা, তাদের মা বাবা বন্ধু,সন্তানদের কথা। এ কারণেই আমাকে ইন্টারনেট এ বসতে হয়। তখন আমি এ সাইট টির সন্ধান পাই। তার পরের ঘটনা ততটা ইতিবাচক না কেননা আমার বিগত তিন-চারদিনের একটা বিশাল অংশ এই সাইটে ব্যয় এবং অ্যালিগেইডলি অপব্যয় হয়েছে। আর লাভ হয়েছে এটা যে আমি বাংলা লেখা শিখে যাচ্ছি। সম্ভবত আগামী ১ বা ২ সপ্তাহের জন্য এটা আমার শেষ পোষ্ট।
আমি কমেন্টের উত্তর দিব যদিও। ইষ্টারের ছুটিতে আবার লিখব। আমি বলছিলাম ধন্যবাদের কথা। আমি আগেই দাবী করেছি সাধারণের ইন্সটিঙ্কট্ আর ক্যাডেট ইন্সটিঙ্কটে একটা পার্থক্য আছে, তা হল সাধারণের ইন্সটিঙ্কট্ যেখানে দুর্বোধ্যতা আর জটিলতা এডিয়ে সস্তা সাধারণ বিনোদন চায়- ক্যাডেট ইন্সটিঙ্কট সেখানে আকর্ষিত হয় দুর্বোধ্যতা আর জটিলতার দিকে। এটা সম্ভবত এই কারণে যে, যা দুর্বোধ্য তা যতক্ষণ আমরা না বুঝি ততক্ষণ বোধহয় আমরা নিজেদের অযোগ্যই মনে করি। এবং উপরোক্ত দাবী সমর্থিত এই এভিডেন্স দ্বারা যে, আমার দুটো পোষ্ট যাদের দুটোই কিনা মোটামুটি টেকনিকল এই পর্যন্ত হিট পেয়েছে প্রায় সাড়ে আটশো এবং কমেন্ট পেয়েছে দেড়শো। এবং এর সবগুলাই বিগত ৪ দিনের ঘটনা। আমার ধন্যবাদ এই জন্যে না যে আপনারা আমার পোষ্ট পড়েছেন বরং এইজন্যে যে ক্যাডেট এবং এক্স-ক্যাডেট নিয়ে আমি যেই উচ্চাশা পোষণ করতাম আপনাদের দ্বারা তা ভঙ্গ হয়নি। এবার আসি কেন এই অ্যাকটিভিটি। ক্যাডেট যারা কিনা চিরুনী-বাছাই করা বাংলাদেশের সবচেয়ে মেধাবী, সবচেয়ে যোগ্য, সবচেয়ে কমপিট্যান্ট নাগরিক তাদের ব্লগে এসে আমি আবিস্কার করি এখানে পর্যাপ্ত প্রফেশনাল লেভেলের পোষ্ট নাই। অথচ এই ছেলেগুলো সবাই প্যাশনেইট। আর প্যাশন্ তখনই সফল যখন কিনা তা সংক্রমিত। আমার প্যাশন বায়োকেমিষ্ট্রি আমি কতজনের মধ্যে সংক্রমিত করতে পারলাম তাই টেস্টিফাই করবে কতটা সফল এবং যোগ্য আমি। যাদের প্যাশন ম্যাথ,ফিজিক্স,কবিতা,রাজনীতি,মানবাধিকার,দর্শন তারাও একই কাজ করলে আমরা উপকৃত হই। প্যাশন জিনিষটা বোধহয় স্পার্ক থেকে শুরু হওয়া বনফায়ারের মত। আমার মনে পড়ে দেড় বছর আগে আমি একদিন হঠাত কিয়েইসিন (kinesin) নামক এক বায়োমলিকিউল যা কিনা এখনও আমার সবচেয়ে প্রিয় মলিকিউল, এর সম্মুখীন হই। আমি দেখি এই সাইটোস্কেলিটাল মোটর প্রোটিন ডায়ামর তার ছোট ছোট দুইটা পা দিয়ে এটিপি হাইড্রোলাইজ করে করে বাচ্চাদের হাঁটার মত করে আমাদের মাইক্রোট্রিবিউল পলিমারের উপর দিয়ে তার আয়তনের চেয়ে কয়েকশ গুন বড় অর্গানেল বহন করে হেঁটে যাওয়ার মত করে এগিয়ে যাচ্ছে। মুগ্ধতায় আমি বলে উঠি “if that is not not beauty i dont know what beauty is”। এর পর আমার আর পিছে তাকাতে হয়নি, আমি অনুধাবন করি বায়োকেম না জানলে আমি মারা যাব, আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে। এই কথা যখনকার তখনও কেমিষ্ট্রিতে আমার কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। এই জেনে চলার ধারা এখনও অব্যহত আছে। সবার কাছে আমার একটা প্রশ্ন আছে আমরা কি কখনও ভেবেছি কতটা ভাগ্যবান আমরা মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহন করে। পুরো পৃথিবীর মাত্র ১% অরগানিক মলিকিউল, তার মধ্যেও বায়োমলিকিউলের হার কত কম। আর বায়ো হলেও আমরা হতে পারতাম একটা স্পন্জ বা একটা কচ্ছপ। বা আমরা যদি হায়ার অর্গানিজমও হতাম যা নিজের শ্রেষ্ঠত্ব দাবী করতে পারে তাহলে দেখা যায় চিতাবাঘ দৌড়ানর জন্য শ্রেষ্ঠ, হাঙ্গর সাঁতারের জন্য, হাতী আকারে শ্রেষ্ঠ এখানে ভাবার জন্য শ্রেষ্ঠ অর্গানিজম হিসেবে জন্মগ্রহন করতে পারাটা কি সৌভাগ্য নয়? তারপর ও ভাবনার সব অ্যাসপ্যাক্টে আমরা শ্রেষ্ঠ নই। গুনন করুন দুটি সংখ্যা ৩৭১০৫৯৮ ও ৪৪৩৮২৫০, যদি আপনারা ১ সেকেন্ডে তা পারেন এবং পুরো পৃথিবীর এনটায়ার ৬.৭ বিলিয়ন পপুলেইশনই যদি এতটা অ্যারিথমেটিকলি কেপাইবল হয় তারপরও আমাদের সবার সম্মিলিত ক্ষমতা যেই কম্পিউটারে বসে আপনি এই পোস্ট দেখছেন তারচেয়ে কম।কতটা ভাগ্যবান আমরা যে এই মহাবিশ্বের রহস্য আমাদের বোঝার ক্ষমতা রয়েছে, তারপরও সেই ক্ষমতা যদি আমরা এই খাতে ব্যয় না করি অবশ্যই সেটা হবে অপব্যয়। বা এটাও কি মজার না যে এই ঘটনার সম্ভবনা কত যে আমার শরীর যার প্রায় পুরোটাই হাইড্রোজেন, এর একটি হাইড্রোজেন পরমানু ছিল ৬৫ মিলিয়ন বছর আগের একটা ডাইনোসরের শরীরের হাইড্রোজেন পরমানু এবং যেই ডাইনোসরের বংশধর পাখির কিচির-মিচির এই মুহুর্তে ভেষে আসছে আপনার জানালা দিয়ে। এখানেই বিজ্ঞানের মজা, যে বিজ্ঞান আমাদের শেখায় কিভাবে আমার আমিত্ব পুরো মহাবিশ্বের সাথে জড়িত। এটা বলা বাহুল্য যে আমাদের জীবনের প্রতিটা পিকোসেকেন্ড আমরা বিজ্ঞানের কাছে ঋণী। তবে বিঙ্জ্ঞান শুধু জীবন বাঁচায়ই না জীবন ভালবাসতেও শেখায়। আমি একে বলি the great green vivace of life. তবে আমি জানি একজন ইনডিভিজ্যুয়ল, একদিন আমি মারা যাব, তবে এই চরম ও অভিনবভাবে সফল মানুষের এই বিপুল জনসংখ্যা টিকে থাকবে, তারা টিকে থাকবে অনন্ত সময়, এমনকি সূর্য সুপারনোভা হয়ে গেলে বা কোন এক অযাচিত প্ল্যানেটারি ডিজাস্টারে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেলে মুভ করবে অন্য কোন গ্রহে, আমার বিশ্বাস এমনকি মহাবিশ্বের বিগ-ক্রাঞ্চ না ঘটতে দেয়ার প্রযুক্তি আবিষ্কার করে তারা টিকে থাকবে অনন্ত অসীম সময়। সবকিছুই থাকবে শুধু আমিই থাকব না, যেমন আমার জন্মের আগে আমি ছিলাম না। আমার জন্মের ১৩.৭ বিলিয়ন বছর আগে ঘটে যাওয়া “রেপিড এক্সপ্যানশন আফ স্পেইস টাইম” বা জনপ্রিয় ভাষায় বিগ ব্যাঙের মাধ্যমে বিশ্বজগতের সৃষ্টি, ৪.৬ বিলিয়ন বছর আগে সৌরজগত ও পৃথিবীর সৃষ্টি, ৪ থেকে ৩.৫ বিলিয়ন বছর আগে সায়ানো-ব্যাক্টেরিয়া রূপে প্রথম প্রটোসেলের বিকাশ, ৫৩০ মিলিয়ন বছর আগে ঘটে যাওয়া ক্যাম্ব্রিয়ান এক্সপ্লোশনের মধ্য দিয়ে অ্যানিম্যালিয়া কিংডম এবং প্রথম বহুকোষী অর্গানিজমের বিকাশ এবং ২০০ হাজার বছর আগে মানুষের উৎপত্তি- কত বড়, বিশাল ব্যাপক ঘটনা এরা এক-একটা। ম্যাথম্যাটিক্স ফিজিক্সে, ফিজিক্স কেমিষ্ট্রিতে, কেমিষ্ট্রি জিওলজি ও বায়োলজিতে অতপর বায়োলজি ইকনমিক্স, ফিলসফি,কমার্স,পলিটক্সে বিকাশ পাওয়া কত বড় ঘটনা এরা এক-একটা। এদের একটা ঘটনার সাক্ষীও আমি হতে পারিনি কেননা আমার জন্ম তখনও হয়নি। একইভাবে ভবিষ্যতেও এরকম ঘটনা যা ঘটবে যেমন ইন্টাস্টেলর ভয়্যাইজ, ইন্টাগ্যাল্যাক্টিক ভয়্যাইজ, ওয়র্মহোল স্ট্যাবিলাইজেইশন, গ্রাভিটেইশনাল ওয়েইভ, থিওরি অফ অ্যাভরিথিং, এক্সট্রা-সেলুলর ডেফিনেইশন অফ লাইফ, ব্রেইন থিওরি, সিনথেটিক লাইফ এইসবের কোনটাও আমি দেখব না। কারণ আমি মারা যাব। আমি মারা যাওয়ার পর হয়ত আমার মৃতদেহ ডিকম্পোজড্ হবে বা ক্রিমেইটেড হবে, বা আমার মৃতদেহের প্লাসটিনেইটেড স্লাইসড্ ডাইসেকশন্ ব্যবহ্রিত হবে পৃথিবীর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানাটমি লেকচার হলে, আমার চোখ আরেকজনের দেখার কাজে লাগবে, আমার হার্ট পাম্প করবে অন্য কোন চেষ্ট-ক্যাভিটিতে, ইতিমধ্যে যেহেতু সফল লিম্বস ট্রান্সপ্লান্ট হয়ে গেছে আমার পা হয়ত কারো হাঁটার কাজে আসবে- যেটাই হোক সেটা আমার আমার জানার কোন উপায় থাকবে না যেহেতু আমিই থাকব না। তারপরও হয়ত কোন এক সময় মানুষ মৃত্য- অন্যান্য সব বায়োলজিকাল ঘটনার মতই যেটা একটা ঘটনা এবং অবশ্যই যা কিনা বায়োকেমিষ্ট্ররই একটা অনাবিষ্কৃত অধ্যায় এবং এখনও পর্যন্ত যেটা সম্পর্কে সে পর্যাপ্ত জানে না- কে জয় করবে, যেই কেমিষ্ট্র জীবনের সূচনা করে সেই কেমিষ্ট্রির সাহায্যেই সে মৃত্যুকে চিরতরে বা কোন বিশাল এক সময়ের জন্য ঠেকিয়ে দিবে। তার আগ পর্যন্ত আমি মনে করি আমাদের দায়িত্ব হওয়া উচিত এই একটি জীবন সফলভাবে, সুখীভাবে এবং পুরোপুরিভাবে বাঁচা।

Blogger templates

.
Recommended Post Slide Out For Blogger